আজ শুক্রবার, ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার : সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন। গতকাল শনিবার (১৭ জুন) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিলে অবস্থিত গিয়াস উদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। আর সাধারন সম্পাদক হয়েছেন গোলাম ফারুক খোকন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে তাদের নাম ঘোষণা করেন। পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ তাদের নাম ঘোষণা করেন।

এদিকে, জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসময় তিনি জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহবান করেন এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন।

এদিকে দলের বৃহত্তর ঐক্যের কথা চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপির কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মাসুকুল ইসলাম রাজীব। ফলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ নেতারা রাজীবের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই উৎসব মুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। সকাল এগারোটার আগেই নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলে হাজির হন। পরে জাতীয় সংগীতের সাথে সাথে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। এছাড়া, বিএনপির দলীয় সংগীতও পরিবেশন করা হয়। এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল কার্যক্রম শুরু হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকনের সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য সেলিমা রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ, বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটু। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম ফজলুল হক মিলন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির, মোস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপু, আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ও প্রতিটি থানা, উপজেলা ও পৌরসভা এবং জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে ২০০৩ সালে জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার।

ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় থাকায় ২০০৯ সালের ২৫ শে নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেয়া হয়। সর্বশেষ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। এর ফলে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

ওই কমিটি ভেঙ্গে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছিল। নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আহ্বায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। উপরন্ত নানা অভিযোগ গড়ায় কেন্দ্রে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে।

দুই বছরের মাথায় একই বছরের ১৫ নভেম্বর মনিরুল ইসলাম রবি ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তারা দায়িত্ব লাভের পর অবশেষে জেলা বিএনপির সম্মেলনের আয়োজন করেছেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় সভাপতি-সেক্রেটারিও নির্বাচিত হলেন।