আজ রবিবার, ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নামী দামি ক্লাবের ফুটবলার এখন নির্মাণ শ্রমিক

আনোয়ার হাসানঃ

ক্ষিপ্রগতিতে মাঠের এপার থেকে ওপার দৌড়াতেন আরিফ হাওলাদার। মাথা উঁচু করে ফুটবলে ছুঁয়ে পরাস্ত করতেন গোলকীপারকে। আর এখন মাথা নীচু করে চুপচাপ নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করে পরিবারের খরচ যোগাতে। এরপরও মনে দুঃখ নেই দেশের সর্বোচ্চ লীগে ও নামী দামি ক্লাবের খেলোয়ার আরিফ হাওলাদারের। তার ভাষায়, আমি কষ্ট করবো তবে আমার মা-বাবা যেন কষ্ট না পায়।

রোববার আরিফের সঙ্গে আলাপ হয় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার উত্তর ইসদাইরের আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে। এ বাড়িতেই ভাড়া থাকেন আরিফের পরিবার।

সে জানায়, ইসদাইর বন্ধন ক্রীড়াচক্র দিয়ে তার শুরু হয়। এরপর অনুর্ধ্ব ১৪, ১৫, ১৬ তে ফুটবল খেলেছেন আরিফ। ২০১০ সালে ভারতের দিল্লীতে সুব্রত কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলে ১৭ নম্বর জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। সে দলের কোচ ছিলেন দেশ বরণ্য ধারাভাষ্যকার আব্দুল হামিদ (প্রয়াত)।

আপনার জন্য নির্বাচিত সংবাদঃ

২০১৪ তে ঐতিহ্যবাহী আরামবাগ ক্লাবের হয়ে স্বাধীনতা কাপে খেলেছেন। ২০১৬ তে একই দলের হয়ে মাঠে নেমেছেন প্রিমীয়ার ফুটবল লীগে। এরপর দল বদল করে চলে যান শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে। সেবার প্রিমিয়ার লীগে ৩৪ নম্বর জার্সি পরে খেলেন তিনি। ওই লীগে আরিফের দল রানার্সআপ হয়। সবশেষ গত মৌসুমে খেলেছেন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপের দল অগ্রণী ব্যাংকে খেলেছেন আরিফ। স্থগিত হয়ে যাওয়া এ মৌসুমে কোন দল ডাকেনি তাকে। নামকরা ক্লাবে খেলে আগের যে আয় তা কী করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফ জানান, আমাদের আয় আমার বাবা ব্যবসা শুরু করেছিলো। ব্যবসায় লোকসান হওয়ায় এখন তাদের দুর্বস্থা।

আরিফের আরেক ভাই রাব্বি হাওলাদারও ফুটবল খেলোয়ার। সেও এবার কোন দলে সুযোগ না পেয়ে চায়ের দোকান চালাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারনে তাও ঠিকমতো চলে না বলে জানান রাব্বি।

আরিফের বাবা শাহজাহান হাওলাদার জানান, ছেলে যখন মাঠে ফুটবল খেলতো টেলিভিশনে দেখে বুকটা গর্বে ভরে যেতো। পরিচিতজনরা ছেলের সুনাম করে আমার মোবাইলে কল দিতো। ছেলেদের খেলা দেখার জন্য মাঠে যেতাম। আরিফ বা রাব্বির পায়ে যখন বল থাকতো তখন দর্শকরা আরিফ– আরিফ, রাব্বি— রাব্বি বলে চিৎকার করতো। তখন মনে খুব সুখ অনুভব করতাম। ভাবতাম, আহ! আমার ছেলেরা আরও উন্নতি করবে।

—— এই বলে ফুপিয়ে কাঁদেন শাহজাহান হাওলাদার।

আর আরিফের মা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বাসা ভাড়া, খাওয়া খরচ এবং আমার ও ওর বাবার ওষধের খরচ যোগাতে ছেলে বাড়িতে না জানিয়ে যোগালীর (রাজমিস্ত্রির হেলপার) কাজ নিয়েছে। এ কাজ অনেক পরিশ্রমের। ও কখনও এমন খাটুনির কাজ করেনি। আরিফের মা আক্ষেপ করে বলেন, ভোলা থেকে আমরা নারায়ণগঞ্জে এসে ভাড়া থাকছি। নিজেদের এক টুকরো জায়গা থাকলে ভাড়া থাকতে হতো না।


এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু জানান, একজন খেলোয়ার এমন কষ্টের কাজ বেছে নিয়েছে শুনে আমি সংগঠক হিসেবে খুব লজ্জাবোধ করছি এ ভেবে যে আমরা তার খোঁজ রাখতে পারিনি। হয়তো করোনা মহামারীতে এমন আরও অনেক খেলোয়ারকে পাওয়া যাবে। তবে তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ না করায় দূরত্ব তৈরী হয়েছে। টিটু বলেন, আমি এ ধরনের পরিস্থিতিতে খেলোয়ারদের বলবো ক্রীড়া সংস্থা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে।

তিনি আরও জানান, বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান শুনে আমাকে বলেছেন আরিফ সহ এমন অসহায় খেলোয়ারদের খোঁজ নিতে। তাদের জন্য খেলার পাশাপাশি যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।