আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নদীর বালুতে লুকিয়ে মূল্যবান খনিজ

অনলাইন ডেস্ক:

দেশের বিজ্ঞানী-গবেষকরা জানিয়েছেন বাংলাদেশের নদীর বালুতে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান খনিজ পদার্থ রয়েছে । সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা, মেঘনা, তিস্তা, ধরলা ও সোমেশ্বরী নদীর কিছু অঞ্চলে মূল্যবান ভারি ও হালকা খনিজের উপস্থিতি রয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছেন।

মূল্যবান এসব খনিজসম্পদ আহরণে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। এরই মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের (চিলমারী এলাকায়) বালুতে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ মূল্যবান খনিজ পদার্থ আছে বলে নিশ্চিত করেছে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি বিভাগ। আর তিস্তা নদীর বালুর নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে ভালো পরিমাণ গার্নেটের উপস্থিতি মিলেছে। যার পরিমাণ ১২ থেকে ১৮ শতাংশ। জয়পুরহাটে মূল্যবান এসব দ্রব্য পৃথকীকরণে ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি বিভাগ একটি প্ল্যান্টও স্থাপন করেছে। গবেষকরা বলেছেন, এ উৎস থেকে খনিজ কণিকা সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হলে কাচশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অন্য খনিজগুলোও পৃথক করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হলে রং, সিরামিকস, ইলেকট্রনিক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের আমদানি কমবে। দেশের নদীগুলোতে মূল্যবান খনিজ পদার্থের উপস্থিতি নির্ণয়ে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) উদ্যোগে নদীবাহিত বালির ওপর অনুসন্ধান ও সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী এই সমীক্ষা চালানো হবে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের নদীবক্ষের বালিতে দুর্লভ, মূল্যবান এবং কৌশলগত মৌল ও খনিজের উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্যভান্ডার গড়ে উঠবে। এতে একদিকে মূল্যবান খনিজসম্পদ আহরণ করা যাবে অন্যদিকে সাধারণ বালির দামে অতি মূল্যবান বালি বিক্রয় রোধ করা যাবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ২০১২-১৩ সালে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা হতে সিরাজগঞ্জ জেলার বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত নদীবক্ষের বালিতে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি বিষয়ে জরিপ চালানো হয়। তখনকার জরিপে আশা জাগানো ফল পাওয়া যায়। ওই সমীক্ষা জরিপের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকার নদীবক্ষের বালুর নমুনা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে প্রতিটন বালুতে ৪০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন ও আড়াই কেজি ইলমেনাইটসহ মূল্যবান খনিজসম্পদের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এসব ধাতু, সিরামিক শিল্প, গাড়ির পলিশিং, পেপার শিল্প, উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশে, হাঁটুর জয়েন্ট বলে, নকল দাঁত ও লোহার আকরিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

সূত্র জানায়, প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবে কক্সবাজারের সমুদ্র তীরের বালুতে ২১ মিলিয়ন টন এবং ব্রহ্মপুত্র নদের বেসিনে ৫ মিলিয়ন টন মূল্যবান ভারী খনিজ কণিকা জমা হয়। নদী থেকে বছরে কমপক্ষে ২৫০ মিলিয়ন টন খনিজসমৃদ্ধ বালু সংগ্রহ করা সম্ভব। সংগ্রহযোগ্য খনিজ থেকে প্রাথমিকভাবে বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে।

ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জি বিভাগ ব্রহ্মপুত্র নদের (চিলমারী এলাকায়) বালুতে তিন থেকে পাঁচ শতাংশ মূল্যবাদ খনিজ পদার্থ আছে বলে নিশ্চিত করেছে। ইনস্টিটিউটের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আশা করছেন ইলমেনাইট, গার্নেট, জিনকন, রুটাইল এবং মেগনেটাইটের মতো খনিজ এই নদের বালুতে পাওয়া যাবে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বালু উত্তোলন করে খনিজ পৃথিকীকরণের কাজ শুরু করছে। ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা লিজ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এভারেস্ট মিনারেল নামে একটি বিদেশি কোম্পানির সহায়তায় এসব খনিজ পদার্থ আহরণের কাজ করছে। এ স্থান থেকে প্রাপ্ত নমুনা যদি সন্তোষজনক হয় পরবর্তীতে খনিজ আহরণে আরও বড় প্রকল্প নেওয়া হবে। এ ছাড়াও তিস্তা নদীর বালুর নমুনাও পরীক্ষা করা হচ্ছে। সেখানে ভালো পরিমাণ গার্নেটের উপস্থিতি মিলেছে। যার পরিমাণ ১২ থেকে ১৮ শতাংশ। সিরিশ কাগজ বানাতে গার্নেট ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়াও সোমেশ্বরী নদীতেও কিছু কোয়ার্টজ পাওয়া গেছে যা উন্নতমানের কাচ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। আগামী বছর পদ্মা নদীর বালু পরীক্ষার কাজ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের নদীবক্ষের বালুতে যে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি রয়েছে তা আশাব্যঞ্জক। এরই মধ্যে নদীবক্ষ থেকে মূল্যবান খনিজসম্পদ উত্তোলনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ দল নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে মাটির নিচে ড্রিল করে দেখবে সেখানে কী পরিমাণ খনিজ পদার্থ আছে।

ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির পরিচালক ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মূল্যবান খনিজ পদার্থ পৃথক করার প্ল্যান্টটি গত বছর আগস্টে চালু হয়েছে। চলতি মাসে এই প্ল্যান্টটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার কথা। বর্তমানে আমরা নদীবক্ষের প্রায় ২৫ টন স্ল্যারি (বালু ও পানির মিশ্রণ) সংগ্রহ করছি। এরপর পরীক্ষাগারের প্রাপ্ত খনিজ আলাদা করা হচ্ছে। এগুলো সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই নমুনা দেখানো হবে।