সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
একবার নির্বাচিত হয়ে দুইবারেরও বেশী সময় ধরে চেয়ারে আছেন আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন ও ফাতেমা মনির। তবে মানুষের দুঃসময়ে খুব একটা দেখা যায় না তাদের। করোনা ভাইরাসে সদর উপজেলা সারা দেশে আলোচিত হলেও এ তিন জনপ্রতিনিধি এক্কেবারে ঘুমিয়ে ছিলেন। এদিকে ফতুল্লার একাধিক ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় বন্যায় মানুষজন ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি দেখতে যাননি স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান।
রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ভুলে ২০০৯ সালে সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হন জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস। আবার কারও মতে, নেতাদের অতি খেলার ফসল পান আজাদ বিশ্বাস। ২০১৪ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের ছায়ায় এখনও চেয়ারম্যান পদে আছেন এ বিএনপি নেতা। সূত্র জানায়, তিনজনের রিট আবেদনে আজাদ বিশ্বাসের হাত থাকলেও তার পেছনে ছায়া রয়েছে শামীম ওসমানের।
জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, আজাদ বিশ্বাসকে ছায়া দেয়ার কারণও রয়েছে। এখন যদি উপজেলা নির্বাচন হয় তবে আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে কোন্দল হবে। বিশেষ করে শামীম ওসমান অনুগতদের মাঝেই দ্ব›দ্ব বাড়বে। কেননা তার কয়েকজন অনুগত সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান। দলীয় সূত্র জানায়, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম এর ইচ্ছা চেয়ারম্যান হওয়ার। তিনি শামীম ওসমানের ডান হাত হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল ও তার ছোট ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভূঁইয়া সাজনুও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চান। তবে হেলাল কিংবা সাজনুর মধ্যে একজনই প্রার্থী হবেন। তারা ছাড়াও আরও কয়েকজন নির্বাচন করতে চায় বলে জানা গেছে। এ কারনে কাকে রেখে কাকে দিবেন তা নিয়ে টেনশন করার চেয়ে আজাদ বিশ্বাসকেই পদে রাখতে আগ্রহী শামীম ওসমান।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, নির্বাচন না হওয়ায় আজাদ বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন ও ফাতেমা মনিররা জনতার তেমন কোন কাজে লাগছেন না। করোনা ভাইরাসের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা যখন হট স্পট তখনও তাদের খুব একটা দেখা মেলেনি। ভাইস চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন ও ফাতেমা মনিরকে কদাচিৎ দেখা গেলেও আজাদ বিশ্বাস ছিলেন একেবারে হাওয়া। নিজ উদ্যোগে করোনাকালে কিছুই করেননি তিনি। এলাকাবাসীর মতে, ২য় বার ভোটারদের ভোট ছাড়া চেয়ারে আছেন তাই মানুষকে কদর করেন না এ নেতা। সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদের তেমন কোন কাজও নেই। তবে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ভবন নির্মাণের অনুমতি পত্র দেয় বলে জানা গেছে। এছাড়া গত ৬ মাস আগে সরকার উপজেলা পরিষদকে যে কোন প্রকল্পের বিষয়ে অবগত করতে নির্দেশ দিয়েছে। অতীতে তা লাগতো না বলে জানা গেছে।
এদিকে জেলার প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরিশ্রমে করোনা সংকট কিছুটা সামলে উঠলেও নতুন করে বন্যা নিয়ে আতংকে আছেন মানুষ। ইতিমধ্যে সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের একাধিক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। পানির তোড়ে ধ্বসে পরেছে এক বিধবার বসত বাড়ি সহ ২টি বাড়ি। ডিক্রিরচর নদী পারাপারের জেটি ও রাস্তায় পানি উঠেছে। বক্তাবলী ফেরী ঘাটেও একই অবস্থা। এতসব কিছু হলেও এখনও ঘুম ভাঙ্গেনি সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের। বিনা ভোটে ২য়বার ক্ষমতায় থাকা এ জনপ্রতিনিধিরা খোঁজ নিতে যাননি বন্যার্তদের।
একই অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের বিরুদ্ধেও। বন্যায় তার এলাকার মানুষজন ক্ষতিগ্রস্থ হলেও গতকাল পর্যন্ত তা দেখতে যাননি তিনি।
জানা গেছে, গত কয়েকদিনে তিনি ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে আসেননি।