আজ শুক্রবার, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুষ্ট চক্রের খপ্পরে শাহজাহান ভুঁইয়া

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ- ১ (রূপগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন টানা ৩২ বছর যাবত রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা আলহাজ্ব শাহজাহান ভূইয়া। নিজের প্রার্থীতার পক্ষে তিনি এবং তার পক্ষের নেতৃবৃন্দ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা ঢাকার প্রবেশদ্বার রূপগঞ্জের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গোলাম দস্তগীর গাজীকেই উপযুক্ত মনে করে চতুর্থবারের মতো দলীয় মনোনয়ন প্রদান করেছেন। গোলাম দস্তগীর গাজী যতবার সংসদ সদস্য হয়েছেন দলীয় মনোনয়নে শাহজাহান ভূইয়া ততবার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

লক্ষনীয় বিষয় হলো, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে শাহজাহান ভূইয়ার নেতৃত্বে কতিপয় নেতাকর্মী সভা সমাবেশের মাধ্যমে গাজীকে হেয় প্রতিপন্ন করে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী উপজেলা নির্বাচনে দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশে গাজী এবং তার সকল কর্মীরা সেই শাহজাহানকেই বারংবার কেন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত করছে? দলীয় আনুগত্যের প্রশ্নে তাহলে কি শাহজাহান পিছিয়ে যাচ্ছে? গাজী যেখানে বারবার দলীয় সিদ্ধান্ত নির্দ্বিধায় মেনে নিচ্ছে শাহজাহানকে কেন সেখানে দলের প্রতীকের বিপক্ষে নির্বাচন করতে হবে? মূলত গাজীকে যেকোনো মূল্যে রূপগঞ্জ থেকে হটাতে প্রবল চাপে রয়েছেন তিনি । সেই চাপ এতোটাই প্রবল যে নৌকার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে তিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আরও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, প্রয়াত আব্দুল মোতালিব, জেনারেল সফিউল্লাহ, দস্তগীর গাজী এবং ভূইয়ার নিজের পরিশ্রমে তিল তিল করে শক্তিশালী হয়ে উঠা শেখ হাসিনার ঘাঁটি রূপগঞ্জ থেকে নৌকা মার্কা প্রত্যাহারের খন্দকারীয় দাবির প্রতি প্রকাশ্যে সুর মেলাচ্ছেন শাহজাহান ও তার অনুসারীরা।

তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এবারই প্রথম তিনি স্বয়ং এরকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন বা নিয়েছেন। ইতিপূর্বে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রয়াত ডাক্তার মোঃ শওকত আলীকে নৌকার বিপক্ষে তালা প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ছিলেন শাহজাহান। তখনও দুষ্ট চক্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো ডাক্তার শওকত শুধু দাঁড়িয়ে থাকবেন বাকী কাজ করবে দলের সাধারণ কর্মীরা। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গিয়েছিলো যে শওকতের উস্কানী দাতা শাহজাহান নিজেই প্রকাশ্যে একটি শব্দও তালা মার্কার পক্ষে উচ্চারণ করেনি বা করতে পারেনি। এগিয়ে আসেনি উৎসাহদাতা সাধারণ নেতাকর্মীরা। নৌকার কর্মীদের তীব্র প্রতিরোধে বানের জলের মতো শওকত আলীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন চিরতরে বিলীন হয়ে যায়। যদিও অনেকে মনে করে থাকেন, ডাক্তার শওকত আলীকে ভবিষ্যৎ উপজেলা চেয়ারম্যান বা দলের সেক্রেটারী পদে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে সুকৌশলে রাজনীতি থেকে বিদায় করেছেন স্বয়ং শাহজাহান। সময়ের ফেরে সেই দুষ্ট চক্রের খপ্পরে তিনি নিজেই ফেঁসে গিয়েছেন। যদিও তার সামনে পথ খোলা আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ অব্দি।

নিজ নিজ হিংসা,রাগ বা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে শওকত ডাক্তারের মতো বলির পাঁঠা বানানো হচ্ছে তাকে। এই স্বার্থান্বেষী চক্র নিয়ে কতদূর এগুতে পারবেন শাহজাহান! এটা মোটা দাগের প্রশ্ন? নাকি তিনিও ডাক্তার শওকত আলীর মতো অতল গহবরে হারিয়ে যাবেন?

জীবন সায়াহ্নে এসে শাহাজাহান ভূইয়া রাজনীতির কঠিন মারপ্যাঁচে আটকে গিয়েছেন। এ যাত্রায় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে রূপগঞ্জে আরও একটি নতুন ইতিহাসের রচনা হতে পারে। আপাতত ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে সকলকে।