আজ শনিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুর্বল হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চল

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

কর্মী সমর্থক যার যত বেশি সে-ই রাজনীতিতে তার কদরই সব থেকে বেশি। সে হিসেবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে উত্তর পন্থীর তুলনায় দক্ষিণ পন্থী হিসেবে পরিচিত আইভী বলয় দিনকে দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই বলয় থেকে সর্বশেষ আনোয়ার হোসেনের বিয়োগ হয়েছে।
এর আগে আইভী বলয় থেকে সরে গিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি এই বলয়ে ঘেঁষছেন না। ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ পন্থী হিসেবে পরিচিত আইভী বলয় গেল সিটি নির্বাচনের পর এ পর্যন্ত একটি শোডাউনও করতে পারেনি। যা নিয়ে শহর কেন্দ্রিক রাজনীতিতে নানা আলোচনা শোনা যায়।
সূত্র মতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে আলাদা একটি বলয় গড়ে উঠে বহু আগের থেকে। এই বলয়ে আনোয়ার হোসেন, আরজু রহমান ভূঁইয়া, আদিনাথ বসু, আসাদুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, আবু সুফিয়ান, জিএম আরাফাত প্রমূখ নেতা ছিলেন। সর্বশেষ উত্তর বলয় থেকে সরে এসে দক্ষিণ বলয়ে আটঘাট বাঁধেন সাংসদ শামীম ওসমানের একসময়কার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আনিসুর রহমান দিপু।
তবে, দ্বিতীয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ বলয়ে ভাঙন শুরু হয়। এই বলয় থেকে আনোয়ার হোসেন ও জিএম আরাফাত সরে যান। তারা সেসময় উত্তর বলয়ে ভিড়েন। সেসময় তারা দুজনই আইভীর বিরুদ্ধে কট্টর সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছিলেন। বিশেষ করে আনোয়ার হিসেন আইভীর বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ উত্থাপন করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এমনকী দুর্নীতির অভিযোগও তুলেছিলেন তিনি।
সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচন শেষে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন আনোয়ার হোসেন। এর কিছুদিন পরই আইভীর সঙ্গে তার দূরত্ব ঘুচতে থাকে। তিনি পুনরায় এই বলয়ে ফিরে আসেন এবং একজন মুরুব্বী হিসেবে ভূমিকা পালন করতে থাকেন। তবে, দ্বিতীয় সিটি নির্বাচন শেষে আইভী ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আবু সুফিয়ানের সঙ্গে মেয়রের দূরত্ব বাড়তে থাকে। যা সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সাধারণের মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠে। বর্তমানে এই দু’জনের মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব।
অনেকেই মনে করে থাকেন, সুফিয়ান যতদিন আইভী বলয়ে ছিলেন ততদিন এই বলয় ব্যাপকভাবে শো-ডাউন করেছিল। নানা সময় মিছিল মিটিংয়েও লোক সমাগমের কমতি ছিল না। তবে এই নেতার বলয় বিয়োগান্তে পূর্বের মত সভা সমাবেশে যেমন লোক সমাগম হয়না তেমনি বিশেষ দিবসে বড় কোনো শো-ডাউনও অনেকদিন ধরে করতে পারেনি দক্ষিণ বলয়। তারপরও এই বলয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের বিচরণ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির শক্ত অবস্থান ছিল। এরমধ্যে সর্বশেষ ১৭টি ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে আনোয়ার হোসেনের ওপর বেজায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন মেয়র আইভী। তিনি এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন যে, আনোয়ার হোসেনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেও বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি দাবি করেছিলেন, আজকের আনোয়ার হোসেনকে তিনি নিজে গড়েছেন।
এদিকে মেয়রের এমন আচরণ ও অবস্থানের মধ্য দিয়ে আনোয়ার হোসেনও আইভী বলয়কে বিদায় জানিয়েছেন তা এখন বলার অপেক্ষা রাখে না। অনেকের মতে, আইভী বলয়ের সঙ্গে অনেকেরই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এসব পরিস্থিতির কারণে দিনকে দিন দক্ষিণের এই বলয় দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করা হচ্ছে। এতে করে সামনের দিনের রাজনীতি এই বলয়ের জন্য অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।