আজ শুক্রবার, ২২শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুই মেরুর দ্বন্দ্বে সুবিধা নিচ্ছে কে?

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:

নারায়ণগঞ্জে উত্তর ও দক্ষিন মেরুর দ্বন্দ্ব বহুদিনের। এই দুই মেরুর দ্বন্দ্ব চলমান। দৃশ্যমান অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগে। নেতা থেকে তৃণমূল সর্বত্রই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য হয়ে পড়ছে। আর এই দ্বন্দ্বে কে বা কারা সুবিধা নিচ্ছে এই নিয়ে প্রশ্ন জনমনে। নির্বাচন পরবর্তী সময়েও কারও বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে না দল। ভৎসনা, অসন্তোষ প্রকাশ আর উপদেশ দেওয়ার মাধ্যমে আপস-মীমাংসার উপরই জোর দিয়েছে দলটি কেন্দ্রীয় নেতারা। খোদ দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপেও দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে পারেনি জেলার নেতৃত্ব দেওয়া নেতারা।

হেভিওয়েট নেতারা বলছেন, পরিবারের মধ্যেও সমস্যা হয়। আওয়ামী লীগ একটা বড় পরিবার, এর মধ্যে মাঝে মধ্যে কিছু ভুল-বোঝাবুঝি হয়। যেখানে সাংগঠনিক সমস্যা, সেখানে সাংগঠনিক সমাধান দেওয়া হচ্ছে। দ্বন্দ্বটা যেহুতু দুদিনের নয় সেহুতু দুদিনেই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটবে না।

আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, টানা ৯বারের মতো দল ক্ষমতায় থাকার কারণে সব স্তরে ‘আমি কী পেলাম আর কী পেতে পারি’ এই প্রশ্নই মুখ্য হয়ে উঠেছে। ফলে দ্বন্দ্ব বহুমুখী রূপ নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিগত দিনে আইভী ও সেলিম ওসমানের মধ্যে একে অপরকে বিরক্ত না করার একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। শামীম ওসমানের বড়ভাই সেলিম ওসমান প্রাচ্যেরডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে বেশ কয়েকবার একটেবিলে বসলেও শামীম ওসমান ও আইভীকে এক টেবিলে বসাতে পারেননি। শেষতকে নারায়ণগঞ্জে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে সংঘাত বাধিয়ে পন্ড করে দিয়েছেন সেলিম ওসমানের উদ্যোগ। এ ঘটনায় দুই পক্ষের ওপরই কিছুটা বিরক্ত দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। সে সময়ে নির্বাচনের আগে হকার উচ্ছেদ করার প্রয়োজন মনে করেননি দলীয় প্রধান। আবার শামীম ওসমান নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে কেন নাক গলাতে গেলেন, এই প্রশ্নও তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী এমনটাই সূত্রে জানা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, আইভীর যে রাজনৈতিক দৃঢ়তা, তিনি শামীম ওসমানকে ছাড় দেবেন না। আর শামীম ওসমান পারিবারিক কর্তৃত্ব হারাতে চাইবেন না। কেন্দ্রীয় নেতারাও দুই পক্ষে বিভক্ত হওয়ার কারণে এই দ্বন্দ্ব শেষ হওয়ার নয়। অনেকে বলেন, নারায়ণগঞ্জ একটি প্রভাবশালী শহর। যেখানে উন্নয়নের অভাব শুধু মাত্র নেতায় নেতায় বিরোধের কারনে। আর প্রভাবশালী শহর এবং প্রভাবশালী দল হবার পরে নিজেদের দ্বন্দ্বের কারনে তৃতীয় পক্ষ কেউ সুবিধা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে এমনটাই অভিযোগ সাধারণ মানুষের।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত মেধাবী ছাত্র ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির পুত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকান্ড নিয়ে সিটি মেয়র আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যকার বিরোধ তুঙ্গে উঠে। বিশেষ করে ২০১৩ সালের বছর জুড়েই ত্বকী হত্যাকান্ডকে নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীতে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করে নারায়ণগঞ্জ নগরীতে।

তবে ওই ঘটনার পরে দীর্ঘদিন নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিবেদমান বিরোধ বাকযুদ্ধেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেলে পাল্টে যেতে থাকে নারায়ণগঞ্জের দৃশ্যপট। ওই নির্বাচনের আগে শামীম ওসমান আইভীকে সমর্থন জানিয়ে তার পক্ষে কাজ করা ছাড়াও আইভীকে ভোট দিয়ে প্রকাশ্য ব্যালটে সিল মারেন। গত সিটি নির্বাচনের পর থেকে একেবারেই থেমে ছিল আইভী ও শামীম ওসমানের মধ্যকার প্রকাশ্য বৈরিতা।

গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে শহরে কড়াভাবে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন ও পুলিশ। এর পর থেকে হকাররা নিয়মিত আন্দোলন করে আসলেও আইভী কোনভাবেই হকার শহরে বসতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর মধ্যে গত ৯ জানুয়ারী সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে সেলিনা হায়াৎ আইভী অভিযোগ করেন শামীম ওসমান তার ছেলের বিয়েতে ২৫ কোটি টাকা খরচ করেছে। আর এখন তিনি হকারদের জন্য মায়াকান্না করছে। এ নিয়েও বলে দুজনের মধ্যে তুমুল বাকযুদ্ধ। সর্বশেষ হকার ইস্যু নিয়ে তুমুল সংঘর্ষের পর আবারও বিরোধের সৃষ্টি হয়। যার কারনে একজন আরেকজনের ছায়াও পাড়াতে পারেন না।

বেশ কিছুদিন দুই মেরুই স্তদ্ধ থাকলেও গত ১৫জুন আলীগঞ্জ মাঠ রক্ষার দাবীতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয় মেয়র আইভী। যেখানে তিনি শামীম ওসমান বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে যেনো শামীম পন্থীদের মধ্যে আগুনে ঘি ঢেলে দিয়েছেন। সংবাদ মাধ্যমে শামীম পন্থী হেভিওয়েট নেতারা একের পর এক বিবৃতি পাঠাতে থাকে। পরদিন ১৬জুন বোমা হামলায় শিকার চন্দন শীল আইভীকে ২৪ ঘন্টার আলটিমেটাম দেবার পরও দক্ষিন মেরুর নেতারা বরাবরের মতোই নিশ্চুপ ছিলেন।

এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, দ্বন্দ্ব অবসানে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তৃতীয় পক্ষ চেষ্টা করবে সুবিধা নিতে, কিন্তু আমরা মনে হয় তারা পারবে না।

এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।