আজ শনিবার, ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৩০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই নৈশ প্রহরী হত্যা- হত্যা মিশনে অংশ নেয় পেশাদার ১১ ডাকাত

দুই নৈশ প্রহরী হত্যা

দুই নৈশ প্রহরী হত্যা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বন্দরের দুই নৈশ প্রহরীকে হাত-পা, মুখ বেঁধে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে হত্যাকান্ডে অংশ নেয়া ডাকাত সদস্যরা। হত্যা মিশনে অংশ নেয় মোট ১১ থেকে ১২ জন ডাকাত। তারা সবাই পেশাদার আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য।
বন্দরে দুই নৈশ প্রহরীকে হত্যার ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ৬ ডাকাত ও লুটকৃত মালামাল ক্রয়কারী এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সাথে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি ও ডাকাতি হওয়অ ব্যাটারি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ডাকাতির দিন দুই নৈশ প্রহরীকে হত্যার কারণও জানিয়েছে গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সদস্যরা। দুই নৈশ প্রহরীকে হত্যার সময় মূল ভুমিকা পালন করে ডাকাত সদস্য রানা ফকির (২১)।
ডাকাতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার মঈনুল হক বিপিএম, পিপিএম সোমবার (৩০ জুলাই) তার সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতরা আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য। এবং পেশাদার। এর আগে তারা মুন্সিগঞ্জে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা তাদের দলীয় প্রধান মোক্তার হোসেনের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্যারেজ ও দোকানে ডাকাতি করে থাকে। বন্দরে ডাকাতির ঘটনাটি তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত। ডাকাতির আগে তারা ঘটনাস্থল কয়েকবার রেকিও করেছিল। এবং গত ঈদুল ফিতরের ৭/৮ দিন পর তারা বাজারে ডাকাতি করতে আসলে নৈশ প্রহরীদের তৎপরতার কারণে ডাকাতি করতে পারেনি। আগের বারের ব্যর্থতা ঘোচাতেই ২১ জুলাই রাতে ডাকাতি কার্যক্রমে বাঁধা দেয়ার কোন উপায় যাতে না থাকে সেজন্য আগেই দুই নৈশপ্রহরীকে হত্যা করে তারা। এরপর ডাকাতি কার্যক্রম সংগঠিত করে ডাকাতদল।
পুলিশ সুপার আরো জানান, নৈশপ্রহরীদ্বয়কে হাত-পা, মুখ বেঁধে ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করেছে বলে ডাকাত সদস্যরা জানিয়েছে। উক্ত ডাকাত দলের মোট সদস্য ছিল ১১ থেকে ১২ জন। এদের মধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তার ও লুট করা অবশিষ্ট মালামাল উদ্ধারের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই রাত ২টার সময় বন্দর থানাধীন লক্ষনখোলা মাদ্রাসা বাজারে অজ্ঞাতনামা ডাকাত সদস্য ডাকাতির সময় বাজারে নৈশ প্রহরী রায়হান উদ্দিন (৩৫) ও মোতালেব (৫৫) কে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাজারের বিসমিল্লাহ ব্যাটারি, সততা ব্যাটারি মেলা ও সততা ব্যাটারি সার্ভিসিং নামক দোকান হতে প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন ব্রান্ডের ব্যাটারি লুট করে নিয়ে যায়। এ সংক্রান্ত বন্দর থানায় ধারা ৩৯৯ অনুযায়ী একটি মামলা রুজু হয়। মামলা নং-৫৩। মামলাটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হওয়াতে পলিশ সুপার মঈনুল হক, বিপিএম, পিপিএম মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) ন্যাস্ত করেন। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মো. নূরে আলম এর নেতৃত্বে ডিবির আরেকটি শাখার উপ পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম, পিপিএম, সহকারী উপ পরিদর্শক (এএসআই) শামীম হোসেন এবং মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক গিয়াসউদ্দিনের টিম নং-০৩ সহ প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকার যাত্রাবাড়ি, নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানাধীন দাশনা গ্রামে ডেমরার সারুলিয়া মহাখালী এলাকায় ২৯ জুলাই বিকাল হতে অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দলের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত সদস্যদের হেফাজত হতে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ (ঢাকা মেট্রো-১৩-৬৯৫০) সহ একটি লোহার শাবল উদ্ধার করা হয়। এরপর ডাকাত সদস্যদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে, গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন তারগাছ এলাকার মায়ের দোয়া ও তামান্না মটরস নামে দোকানে অভিযান পরিচালনা করে মায়ের দোয়া দোকানের ম্যানেজার মো. আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে লুন্ঠিত ব্যাটারির মধ্যে বিভিন্ন ব্রান্ডের ৭০ হাজার টাকা মূল্যমানের ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত ডাকাতদের নাম, মো. মোক্তার হোসেন (২২), রনি হোসেন (২০), রানা ফকির (২১), জাহিদুল শরিফ ওরফে তাহিদুল ওরফে তৌহিদুল (২৪), জসীম ওরফে মুন্না (২৬), মো. শাওন রানা (২১)। এর মধ্যে লুন্ঠিত মালামাল ক্রয়কৃত আসামী মো. আতিকুর রহমান (২৫)। ডিবির তথ্যমতে, দুই নৈশ প্রহরীকে হত্যায় মূল ভুমিকা পালন করে রানা ফকির।

সর্বশেষ সংবাদ