স্টাফ রিপোর্টার :
মেয়র আইভীকে নিয়ে কটুক্তি এবং রাসেল পার্ককে মিনি পতিতালয় আখ্যায়িত করার প্রতিবাদ জানানোয় এবার আলোচিত আইনজীবি ও আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান দিপুকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান এবং তার অনুসারীরা। গতকাল ওলামা পরিষদের ব্যানারে হেফাজত নেতাদের সভা থেকে এই হুমকি দেয়া হয়। ফেরদাউস ও তার সহযোগিদের এমন হুংকারে শহর কেন্দ্রীক রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। কার আস্কারায় ফেরদাউস ও তার অনুসারীরা এমন আস্ফালন দেখাচ্ছেন- তা নিয়ে আলোচনা চলছে সচেতন মহলে। ওলামা পরিষদ নেতাদের এমন লাগাতার হুমকিতে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়- তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই।
জানা গেছে, চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্মিত শেখ রাসেল পার্কের ‘পার্ক লাউঞ্জ’ নামক রেস্টুরেন্টে এসএসসি ৯৫ ব্যাচের অনুষ্ঠান চলছিল। পাশাপাশি পার্কের ভেতরে সোনালী ব্যাংকের ব্যাংকার্স ডে এবং নারায়ণগঞ্জ চারুকলায় বসন্তবরণের প্রস্তুতি চলছিল। রাতে এশার নামাজের পরে ডিআইটি মসজিদ থেকে মুসল্লিরা পার্ক লাউঞ্জে এসএসসি ৯৫ ব্যাচের অনুষ্ঠান ও চারুকলায় হামলা-ভাঙচুর চালায়। ডিআইটি মসজিদের খতিব আবদুল আউয়াল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির।
এই ঘটনায় গত ৩ এপ্রিল মামলা দায়ের করে সিটি করপোরেশনের আইন বিষয়ক কর্মকর্তা। এই মামলায় প্রধান আসামী করা হয় ওলামা পরিষদের নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি ও হেফাজত ইসলামের নেতা মাওলানা ফেরদাউসুর রহমানকে। মামলার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে হুমকি-ধামকী সহ নানা ভাষায় কটুক্তি করা হয়। এই কটুক্তি ও হুমকির প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জে উত্তেজনা শুরু হয়। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ সভা করেন।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু। হেফাজত নেতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি কে আমরা জানি। আমার কাছে মামলার এজাহার আছে। গরু কিনে দাম না দিয়ে চলে আসছেন। গরু চোর! আমার কাছে মামলার এজাহার আছে। হাজী মহিলার স্বর্ন চুরি করেছেন। হাজীদের কোরবানীর টাকা মেরে দিয়েছেন, এজন্য হাজীদের হাতে গণপিটুনি খেয়েছেন। এগুলো আমরা প্রকাশ করতে চাই না।’
এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে গতকাল ওলামা পরিষদের ব্যানারে মানববন্ধন করেন হেফাজত ইসলামের নেতাকর্মীরা। ওই সভা থেকে অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুকে নানা ভাষায় হুমকি দেয়া হয়।
মানববন্ধনে মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ‘সামনে বড় কর্মসূচি আসছে। আমাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে না নিলে এই নারায়ণগঞ্জে দাউ দাউ করে আগুন জ¦লবে। হেফাজত ইসলামের কোনো নেতাদের নিয়ে যদি আর কোনো মন্তব্য করা হয়, তাহলে নারায়ণগঞ্জের রাজপথে এমন আন্দোলন গড়ে তুলবো! আমাদেরকে আন্দোলন শিখাইয়েন না। নারায়ণগঞ্জের রাজপথে আমরা আন্দোলন করেছি। এখনো আন্দোলন করছি। ভবিষ্যতে বুঝায়া দিব কত ধানে কত চাল। দেখবো আপনাদের খুঁজে পাওয়া যায় কিনা- সেদিন তৌহিদী জনতার দৌড় খেয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে আমরা না, আপনারা পালিয়ে যাবেন।’
ফেরদাউসুর রহমান বলেন, ‘আপনারা এই নোংড়া খেলা কেন শুরু করেছেন। এই নোংড়া খেলার সমাপ্তি যদি না করেন, সামনে কর্মসূচি আসছে, আজকে (গতকাল) মাগরীবের পরে তারিখ নির্ধারণ হবে। দেখবো খেলা কাকে বলে। আপনারা কয়জন থাকতে পারেন, আর আমরা কয়জন থাকতে পারি, বাপের বেটা যদি হন, আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। আর যদি কাপুরুষ হয়ে থাকো, তাহলে সামনে আর একটা কথা বলারও অধিকার তোমাদের নাই। এই ছোটো খাটো খেলা এগুলো আমরাই খেলতে পারি। একটা ভেঁচকি দিলে দৌড়ায়া যাইবোগা। ওই যে চুনকা পাঠাগারের সামনে রাস্তা বন্ধ কইরা ত্বকী মঞ্চের নামে, বামের নামে, রামের নামে রাস্তা বন্ধ কইরা শুরু করলেন কী! ভালো মানুষকে গালাগালি করবে, আব্দুল আউয়াল সাহেবকে গালাগালি করবে, আলেমদেরকে গালাগালি করবে, সাবধান! ভবিষ্যতে এই দুঃসাহস আপনারা দেখাবেন না। নারায়ণগঞ্জবাসী আমাদের সাথে আছে, নারায়ণগঞ্জবাসী আমাদের সাথে থাকবে।’
মেয়র আইভীর পক্ষে বিবৃতি এবং প্রতিবাদ জানানোদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করে ফেরদাউস বলেন, ‘আরে বেটা জঙ্গী বলে কাকে ভয় দেখাস, জেলে আমাদের যাইয়া অভ্যাস, মামলা আমাদের খাইয়া অভ্যাস। তোগো মতন এই ছ্যাছরা মামলা আমরা গোনায়ও ধরি না।’
মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান ও হেফাজত ইসলামের নেতাদের এমন মন্তব্যের পর নগরবাসী বলছেন, ‘যেকোনো সময়ে নারায়ণগঞ্জের শান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে। তবে ওলামা পরিষদ ও হেফাজত ইসলামের নেতাদের পেছন থেকে কেউ আস্কারা দিচ্ছেন কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে।
অভিযোগ রয়েছে, হেফাজত নেতারা নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী একটি পরিবারের ‘প্রক্সি গ্রুপ’ হিসেবে পরিচিত। মেয়র আইভীর সঙ্গে চির বৈরীতায় জড়িয়ে থাকা ওই পরিবারের সাথে বেশ দহরম-মহরম সম্পর্ক রয়েছে মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদাউসুর রহমানের। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এক রাজনীতিবীদ যেমন মেয়র আইভী এবং তার অনুসারীদের বিরোধীতায় সরব ছিলেন, তেমনই সরব ছিলেন নারায়ণগঞ্জের হেফাজত নেতারাও। পূর্বের ঘটনার সাথে বর্তমান প্রেক্ষাপটও একই সুতোয় গাঁথা কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।