আজ রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ত্বকী হত্যার ৯৪ মাসে আলোক প্রজ্বালন

প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ৯৪ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালনের আয়োজন  করেছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। শুক্রবার ৮ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে এ আয়োজন করা হয়।  

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদের সঞ্চালনায় ভবানী শংকর রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, নিহত ত্বকীর বাবা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি সাংবাদিক হালিম আজাদ, দৈনিক খবরের পাতার সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এড. জিয়াউর ইসলাম কাজল, সহ সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, উদীচী জেলা সভাপতি জাহিদুল হক দীপু, সমগীত সংস্কৃতি প্রঙ্গণের কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল আকাশ, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপ জেলা সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টি জেলা সভাপতি হাফিজুর রহমান, কবি ও মানবাধিকার কর্মী শাহেদ কায়েস ও সামাজিক সংগঠন সমমনার সভাপতি দুলাল সাহা।

রফিউর রাব্বি বলেন, শাসকগোষ্ঠী মনে করে তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় না থাকলে দেশ উন্নত হবে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে না- আর তাই উন্নয়ন আর জিডিপি দেখিয়ে তারা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে যেয়ে প্রতিনিয়ত জনগণের মৌলিক অধিকারকে হরণ করে চলেছে, জনগণের বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকারকে হরণ করেছে। তারা শৃঙ্খলিত করেছে বিচারব্যবস্থাকে, নির্বাচন কমিশনকে, সকল গণমাধ্যমকে। সকল বিরুদ্ধ মতকে তারা দমন করতে যেয়ে দেশে একনায়কতান্ত্রিক কর্তৃত্তবাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে; আর তাই ত্বকী হত্যার ঘাতক সনাক্ত হলেও তারা আইনের আওতায় আসে না, অভিযোগপত্র তৈরী করেও তা তারা ৯৪ মাস ধরে আটকে রাখে। জনগণের নিরাপত্তা দেয়ার শপথ করে শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল অথচ তারাই পদে পদে সে শপথ ভঙ্গ করে চলেছে, সংবিধান লঙ্ঘন করে চলেছে।

তিনি বলেন স্বাধীনতার পূর্বে বিদেশী শাসকগোষ্ঠীর শাসনামলেও এমনি বিচারহীনতার নজির ছিল না। দলীয় দূর্বৃত্তদের রক্ষা করার জন্য সরকার প্রায় আট বছর ধরে ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রেখেছে। তিনি ত্বকী সহ সাগর-রুনী, তনু ও নারায়ণগঞ্জের আশিক, চঞ্চন, বুলু, মিঠু হত্যার বিচার দাবি করেন। আড়াই বছর আগে নিখোঁজ আড়াই বছরের শিশু সাদমান সাকির উদ্ধার দাবি করেন।

মাহাবুবুর রহমান মাসুম বলেন, ত্বকীর ঘাতক ওসমান পরিবার এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তারা নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন আপনি নারায়ণগঞ্জের মানুষের পাশে দাঁড়ান, নারায়ণগঞ্জের সকল হত্যার বিচার করুন।

হালিম আজাদ বলেন, সাত বছর আগে ত্বকী হত্যার তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র তৈরী করে রাখার পরেও তা আদালতে পেশ করা হয় নাই। প্রধানমন্ত্রীর অনিচ্ছার কারণে এ হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সরকার মুখে যাই বলুক না কেন এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতরা যেহেতু সরকার দলীয়, সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আছে, সে কারণেই আট বছর হতে চলল অথচ এ বিচার হচ্ছে না। ত্বকী হত্যার এক বছরের মধ্যেই তদন্ত সংস্থা র‌্যাব তদন্ত শেষ করে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে ওসমান পরিবারের ১১ জন লোক ত্বকীকে হত্যা করেছে। অথচ সে ঘাতক খুনীরা সরকারের সহায়তায় আজো ঘুরে বেড়ায়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন আপনাকে ত্বকী হত্যার বিচার করতে হবে।

ভবানী শংকর রায বলেন, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে হত্যা করা হয়। এর দুইদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে আমরা ত্বকীর লাশ উদ্ধার করি। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আমরা এ বিচারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট আলোকপ্রজ্বালন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছি। সরকারের বৈষম্যমূলক বিচার ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘ ৯৪ মাসেও এ হত্যার বিচার হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দু’দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক

জবানবন্দীতে জানায়, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এর পর থেকে ত্বকীর হত্যার বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোকপ্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।