আজ শনিবার, ২৪শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তাদের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট :

স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজেদের জনপ্রিয়তার কারণেই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, দেলোয়ার হোসেন প্রধান, এম এ সালাম এবং কামাল হোসেন। তাদের রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাঙ্ক। উপজেলার পাঁচজন চেয়ারম্যানের মধ্যে ওই চারজনই ছিলেন সেলিম ওসমান সমর্থিত প্রার্থী এম এ রশীদের পক্ষে। তারপরও তাকে বরণ করে নিতে হয়েছে শোচনীয় পরাজয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেখানে পাঁচ ইউনিয়নের মধ্যে চারজন চেয়ারম্যানই ছিলেন এম এ রশীদের পক্ষে। সেখানে তাদের নিজস্ব যে ভোট ছিল তা যদি রশীদের পক্ষে যেত তাহলে তিনি নিশ্চিত জয়ী হতেন। এতে কোনো ভুল নেই। এমন সমীকরণই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু ভোটের ফলাফল হয়েছে একদমই উল্টো। সদ্য শেষ হওয়া বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের অর্ধেক ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন এম এ রশীদ।
এদিকে চারজন চেয়ারম্যান এম এ রশীদের জন্য মাঠে কাজ করেছেন। নিয়মিত উঠান বৈঠকও করেছেন। এরপরও এম এ রশীদের অমন শোচনীয় পরাজয় কেনÑ সে হিসেব কোনোভাবেই মেলাতে পারছেন না সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, যে চারজন চেয়ারম্যানকে এম এ রশীদের পক্ষে কাজ করতে দেখা গিয়েছে মন থেকে হয়তো তারা এম এ রশীদের পক্ষে ছিলেন না। থাকলে অন্তত ভোটের ফলাফল এতটা দুরাবস্থা হতো না।
সূত্র মতে, বন্দরের ৫টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে কলাগাছিয়া ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ৯শ ৭৪, বন্দর ইউনিয়নে ২৫ হাজার ৪৮, ধামগড় ইউনিয়নে ২১ হাজার ৬শ ৭৯ এবং মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার সংখ্যা ১৬ হাজার ৫শ ১। অর্থাৎ এই চার ইউনিয়নে মোট ভোটার হচ্ছেন, ১ লাখ ১ হাজার ২০২। কিন্তু ভোট ফলাফলে এম এ রশীদের সর্বমোট প্রাপ্ত ভোট হচ্ছে, ১৪ হাজার ৮৩৮টি।
অন্যদিকে মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ভোটার সংখ্যা ২১ হাজার ৬শ ৭৯ জন হলেও এই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সর্বমোট ভোট পেয়েছেন এম এ রশীদের দ্বিগুণ। অর্থাৎ তার প্রাপ্ত ভোট ২৯ হাজার ৮৭৩টি।
স্থানীয়রা বলছেন, রশীদের পক্ষে যেসব চেয়ারম্যানরা মাঠে কাজ করেছেন তারা সেভাবে আন্তুরিক ছিলেন না। আন্তুরিক হলে এত কমসংখ্যক ভোট তিনি পেতেন না। ভোটের হিসেবে বলে দিচ্ছে তারা নিজেরাও চাননি এম এ রশীদ নির্বাচিত হোক। হয়তো সে কারণেই প্রাপ্ত ভোট ও মোট ভোট সংখ্যার মধ্যে এতটা পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
স্থানীয়রা আরও বলছেন, সাংসদ সেলিম ওসমানের নির্দেশে এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, দেলোয়ার হোসেন প্রধান, এম এ সালাম এবং কামাল হোসেন এম এ রশীদের পক্ষে মাঠে নেমেছিলেন। অনেকের মতে তারা ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই সাংসদের মন রক্ষার্থে মাঠে নেমেছিলেন। সে কারণেই হয়তো ভোটের ফলাফল অমন হয়েছে। কেননা, এম এ রশীদের সঙ্গে অনেক আগের থেকেই বৈরি সম্পর্ক ছিল এম এ সালামের। আবার তিনি উপজেলা নির্বাচন করার জন্য শুরু থেকেই প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। কিন্তু শেষতক সাংসদ সেলিম ওসমানের সমর্থন না পাওয়াতে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। অনেকের মতে, মনের বিরুদ্ধে গিয়েই তিনি নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন।
এছাড়া মুখে প্রকাশ না করলেও বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে মুখিয়ে ছিলেন বন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান। তবে শেষতক তারা কেউ সাংসদের সমর্থন পাননি। সাংসদ সমর্থন করেন এম এ রশীদকে। এবং সাংসদের সেই সমর্থন শীরধার্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন এসব চেয়ারম্যানরা। ফলে নির্বাচনী মাঠে তারা মন থেকে কেউ এম এ রশীদকে জয়ী করানোর জন্য যতটা প্রয়োজন ততটা কাজ করেননি বলেই মনে করা হচ্ছে।