আজ বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

তদন্ত নিয়ে যত প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার :

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেলকে নিয়ে নানামুখি আলোচনা-সমালোচনা চলছে তৃণমূলে। রোজেল কান্ডে দলের সিনিয়র নেতাদের মাঝেও নানা গুঞ্জন চলছে।
বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা হয়েও আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের কল্যাণে প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই রোজেলকে নিয়ে এমন সমালোচনা ও গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, বিএনপি নেতা জাহিদ হাসান রোজেল ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম সাইফউল্লাহ বাদল পরস্পর আপন মামাতো-ফুপাতো ভাই। রোজেল বিএনপি করলেও তার সাথে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সখ্যতা ও উঠা বসা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মাজারে যাওয়ার সফর সঙ্গি হিসেবে রোজেলের সাথে যারা ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই ফতুল্লার আওয়ামী লীগ নেতারা।
ইতিমধ্যেই রোজেলের বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন হয়েছে। এদিকে, গঠিত তদন্ত কমিটি নিয়েও নানামুখি সমালোচনা চলছে তৃণমূলে। কেননা, গত ১৮ই জুলাই তদন্ত কমিটি গঠনের ৫দিন পেড়িয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কার্যক্রমই শুরু করেননি কমিটির ৩ সদস্যের কেউই।

জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ থানা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নাসির উদ্দীন ও লুৎফুর রহমান আব্দু। তারা কেউই এখনো পর্যন্ত ওই ঘটনার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেননি। এই বিষয়ে তদন্ত বা আলোচনা করতে এখনো পর্যন্ত ওই তিনজনের কেউই একত্রিত হননি। তাদের কাধে ওই ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেয়া হলেও তাদের এমন ঢিমে তালে ভাবের কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে নানা প্রশ্ন জেগেছে।
দলের বিভিন্ন সূত্রের দাবি, নিজেকে বাঁচিয়ে নিতে ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটির সদস্য ও জেলার শীর্ষ নেতাদের কাছে দৌড়ঝাপ করছেন রোজেল। তাই রোজেলের বিষয়টি ঢিল দিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত কমিটিতে থাকা মান্নান ও আব্দুর সাথে রোজেলের আগে থেকেই বিশেষ সখ্যতা রয়েছে। তাছাড়া, তদন্ত কমিটি গঠন করা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মামুন মাহমুদের বলয়ে রাজনীতি করছেন রোজেল। এমনকি ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক পদে রোজেলকে জায়গা করে দিতে মামুন মাহমুদ বিশেষ চেষ্টা করেছেন বলে খবর রটেছে। জেলা বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসেবে এই মামুন মাহমুদই তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের ফয়সালা নির্ধারনে ভুমিকা রাখবেন। তাই রোজেল যেখানে মামুন মাহমুদের অনুগত, সেখানে রোজেলের বিরুদ্ধে প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়টি প্রতীয়মান হলেও শেষকত যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা মামুন মাহমুদ, সেই প্রশ্ন জেগেছে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে। এছাড়াও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিরপেক্ষ হবে কিনা- সেই প্রশ্নও উঠেছে বিএনপি অঙ্গণে।
এদিকে, তদন্ত কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নাসির উদ্দীন দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমাকে তদন্ত কমিটির সদস্য করার বিষয়ে চিঠি পেয়েছি। এখনো কমিটির অন্য সদস্যদের সাথে বসা হয়নি। এটা নিয়ে বসবো। যেই দুজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে ছিল বলে তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের সাথে যোগাযোগ করা হবে। পরবর্তীতে তদন্ত প্রতিবেদন করে তা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে দাখিল করা হবে।’
লুৎফুর রহমান আব্দু বলেন, এখনো সদস্যদের সাথে বসা হয়নি। ৩-৪দিন পর বসবো। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

উল্লেখ্য যে, গত ১২জুলাই বিকেলে ফতুল্লা থানা আ’লীগের কয়েকজন নেতার সাথে একটি কালো মাইক্রোবাসে করে টুঙ্গীপাড়ায় যান বিএনপির এ নেতা। মাজারের গেটে সাংবাদিকদের দেখে তিনি সাথে সাথে গাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন।
গাড়ির কাছে গিয়ে রোজেলের সাথে দেখা করেন এবং কুশল বিনিময় করেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকরা তার সাথে কথা বলে ফিরে আসার সময় বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন রোজেল। যদিও পরবর্তীতে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছেন।