আজ শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঝুলছে দেড়শ কোটির প্রকল্প

স্টাফ রিপোর্টার  :

বরাবরের মত ২০২১ সালের বর্ষায়ও ডুবেছিল ফতুল্লার বিস্তীর্ণ এলাকা। আমেরিকা সফর থেকে দেশে ফিরেই এমপি শামীম ওসমান দিয়েছিলেন জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের আশ^াস। মূলত, এলজিইডির ১৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের উপর ভর করে বছর তিনেক আগে সেই আশ^াস দিলেও ওই প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়নি আজও। এবার বর্ষা মৌসুমের আগেই ঘূর্ণিঘড় রিমেলের প্রভাবে আবারও ডুবেছে ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলগুলো। যথারীতি আবারও সেই প্রকল্পের কথাই বলে যাচ্ছেন এমপি শামীম ওসমান। প্রতিবার একই প্রকল্পের কথা বলায় ভুক্তভোগীরা প্রশ্ন তুলে বলছেন- তবে কী সমালোচনা এড়াতেই মুলো ঝুলিয়ে রেখেছেন শামীম ওসমান!
জানা গেছে, গত ২৯ মে ফতুল্লার লালপুরের জলাবদ্ধতা নিরসন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশ নেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য। এসময় তিনি এলজিইডির ওই প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছেন যে, এলজিইডি ব্যর্থ কিনা। এটা সত্য কথা যে এলজিইডিতে আমরা প্রজেক্ট দিয়েছি। তবে এলজিইডি ব্যর্থ না- একারণেই বলবো যে, আমাদের মাননীয় এলজিইডি’র মন্ত্রী যিনি আছেন, তিনি অত্যন্ত সুদক্ষ এবং মেধা সম্পন্ন ব্যক্তি। উনি চান সারা বাংলাদেশেই কাজ হোক। নিচের লেভেল থেকে হয়তো এই প্রজেক্টটা ওনার কাছে গিয়ে পৌঁছায়নি। আমার বিশ^াস, যদি এই প্রজেক্টটা ওনার কাছে গিয়ে পৌঁছায়, তাহলে এই এলাকাবাসীর কষ্ট দেখে তিনি এই কাজটি আরও বেশি ত্বড়ান্বিত করবেন। আমার মতে, এই জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানের জন্য এলজিইডির সাহায্য লাগবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে শামীম ওসমান বলেন, ‘এখানে টেকনিক্যাল বিষয় রয়েছে। ডিএনডি প্রজেক্টের কাজে নিয়োজিত সেনাবাহিনী এবং এলজিইডির লোকেরা এখানে এসেছিলেন। তারা দেখেছেন যে, নরমাল ভাবে পানি পাস করা যাচ্ছে না। এটাকে কিভাবে পাস আউট করতে হবে তা সম্পূর্ন টেকনিক্যাল বিষয়। আমাকে বলা হয়েছে যে, এটা স্পেশাল প্রজেক্ট করে অলরেডি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এখন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তো কিছু থাকেই। আমি এলজিইডির মন্ত্রীর সাথে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলবো। আমার বিশ^াস ওনারা এই সমস্যার সমাধানটা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে, এমপি শামীম ওসমান এলজিইডির ওই প্রকল্পের কাজ শুরু না করার আক্ষেপ প্রকাশ করলেও নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মোসা. শামসুন নাহারের ভাষ্য, আরও আগে থেকেই কিছু কিছু জায়গায় ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন তারা।
দৈনিক সংবাদচর্চাকে তিনি বলেন, ‘ওই প্রকল্পের কাজ তো আমরা শুরু করে দিয়েছি। এটা চলমান অবস্থায় আছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় এর কাজ শুরু হয়েছে। তবে ড্রেনের কাজটা এখনো শুরু হয়নি। এটার জন্য কনসাল্টিং ফার্ম আছে। তারা ড্রেনগুলোকে একটা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে খালের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের আনুসাঙ্গিক কাজ জুনের মধ্যে শেষ হবে এবং জুলাই থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ শুরু করবো।’
সচেতন মহল বলছেন, জুন-জুলাই থেকে মূলত ভরা বর্ষার মৌসুম বিরাজ করে। এই সময়টাতে জলমগ্ন থাকে ফতুল্লার নিম্নাঞ্চলগুলো। ওই সময়ে প্রকল্পের কাজে হাত দিলে আদৌ তা শুরু করা যাবে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অনেকের মতে, বিগত শীত মৌসুমে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা গেলে এবারই এর সুফল পাওয়া যেত।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে পানিবন্দি মানুষের ক্ষোভ বিগরে যাওয়ার পর সদর উপজেলার জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকাগুলোর দুর্দশা লাঘবের জন্য এলজিইডির ১৫০ কোটি টাকার এক প্রকল্পের কথা তুলে ধরেছিলেন এমপি শামীম ওসমান। তিনি বলেছিলেন, এই প্রকল্প পাশ হলে সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী ভাবে মুক্তি মিলবে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একনেকে পাশ হয় ১৫০ কোটি টাকার ওই জিওবি প্রকল্প। তবে এ প্রকল্প পাসের দীর্ঘ প্রায় দুবছর অতিবাহিত হতে চললেও কাজের দেখা মিলেনি।
জানা গেছে, ডিএনডির মেগা প্রজেক্টের আওতায় না আসেনি ফতুল্লার লালপুর ও ইসদাইর এলাকা। তাই ভারি বর্ষন হলেই এসব এলাকায় নৌকা দিয়ে চলাচল করতে হয় স্থানীয়দের। এমনকি বৃষ্টি না হলেও বছরের বেশিরভাগ সময়ে জলাবদ্ধতা থাকে লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকায়। ডিএনডির মেগা প্রজেক্টের কাজ চললেও প্রকল্পের আওতায় না আসায় দুঃসহ ভোগান্তির চিত্রের পরিবর্তন হয়নি সেখানে। বর্তমানেও মানবেতর জীবন যাপন করছেন প্রায় তিন লক্ষাধিক মানুষ। যদিও মানবতার দিক বিবেচনায় প্রকল্পের বাইরে গিয়েও লালপুর ও ইসদাইরের জলাবদ্ধতা দূর করণে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল ডিএনডি প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর সদস্যরা। লালপুর পাম্প হাউজে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একাধিক পাম্প প্রদান এবং ইসদাইরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া একটি দখলকৃত খাল উদ্ধার ও খননও করতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীকে। তবে, লালপুর, ইসদাইর এবং ফতুল্লার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চলের অভ্যান্তরীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হওয়ায় সেনাবাহিনীর প্রাথমিক প্রচেষ্টাতেও খুব একটা সুফল মেলেনি সেখানে। ডিএনডি প্রজেক্ট সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ভাষ্য, খাল দখলমুক্ত হলেও অভ্যান্তরীন ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভঙ্গুর হওয়ায় খাল পর্যন্ত পানি আসছে না। তাছাড়া, এসব এলাকার সড়কগুলোও পরিকল্পনা মাফিক উন্নয়ন হয়নি। তাই জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না স্থানীয়দের।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ