আজ মঙ্গলবার, ১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ছাত্রলীগ নেতাদের ‘জামিনদার’ জালাল হাজী

স্টাফ রিপোর্টার

নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক ইতিহাসে দু’টি পরিবারে তিন প্রজন্ম জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। এরমধ্যে হাজী জালাল উদ্দিন অর্থাৎ জালাল হাজীর পরিবার একটি। তিনি নিজে ও তার ছেলে এমপি হয়েছেন সেই সাথে নাতি হয়েছেন কাউন্সিলর। স্থানীয় রাজনীতিকদের মতে, রাজনৈতিক অবস্থান, জনপ্রিয়তা, অর্থ সম্পদের দিক থেকেও কোন অংশে কম নয় তারা। তবে প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকলেও তা মানুষকে দেখাননা তারা।

সূত্র মতে, ১৯৭৯ সালে ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা- ৩২ আসনটি ছিলো এখনকার নারায়ণগঞ্জ-৫। এখানে বিএনপির মনোনীত হয়ে সংসদ সদস্য হন হাজী জালাল উদ্দিন, যিনি জালাল হাজী নামে পরিচিত। শহরের প্রবীণ রাজনীতিক, সাংস্কৃতিকজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অত্যন্ত রসিক মানুষ ছিলেন জালাল হাজী। নাটকের মঞ্চে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয়ের সময়ে নারায়ণগঞ্জের অনেক নাট্য পরিচালক বলতেন, ‘জালাল হাজীর মতো বসো’। জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে চেয়ারে এক পা তুলে হাসিমাখা মুখে কথা বলতেন জালাল হাজী। তিনি বিএনপির নির্বাহী কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।

১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর সব রাজনৈতিক দলের তুমুল আন্দোলনের ফলে ৯ বছরের শাসন ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে তত্ববধায়ক সরকারের অধীনে একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়। এ নির্বাচনে শহর-বন্দর নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান অধ্যাপিকা নাজমা রহমান। যিনি শহর ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে ছিলেন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি নারায়ণগঞ্জের অগ্নিকণ্যা খ্যাতি পেয়েছিলেন। প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের তুলনায় একেবারে নবীণ এডভোকেট আবুল কালাম। সে সময়ে আবুল কালাম নির্বাচনী সভায় নিজেই বলতেন, আমি রাজনীতিতে নতুন। রাজনীতি সচেতন মহল এমনকি সাধারণ মানুষ মনে করেছিলেন, নাজমা রহমানের মতো জাদরেল নেত্রির কাছে পাত্তা পাবেন না তিনি। তবে নির্বাচনে ভোট গণনা শেষে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। জয়ী হন নবীণ আবুল কালামই। অনেকে মনে করেন, ওই নির্বাচনে তার উৎরে যাওয়ার পেছনে কাজ করেছে দু’টি বিষয়। প্রথমত তিনি ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী দ্বিতীয়ত জালাল হাজীর ছেলে। আবুল কালাম এ আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় রাজনীতিক হিসেবেও তার নামডাক রয়েছে। এরপরও তিনি প্রভাব বিস্তার করেছেন কিংবা দস্যুতা-সন্ত্রাসীদের মদদ দিয়েছেন এমন অভিযোগ কেউ কখনও করেননি। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির কতিপয় এমপির প্রভাব-প্রতাপ নিয়ে মানুষ উৎকন্ঠায় থাকে। তাদেরচেয়ে আরও বেশী ভয়ংকর থাকে তাদের অনুগত ও কথিত এপিএসরা। তবে আবুল কালামের দীর্ঘ দিনের পিএস মোহাম্মদ সোলায়মানের নামেও কোন বদনাম রটেনি। একজন এমপির এত ঘনিষ্ঠ হয়েও তাকে সব সময়েই সাদামাটাভাবে চলতে দেখে মানুষজন। নারায়ণগঞ্জের বিএনপি তো বটে আওয়ামীলীগের অনেক রাজনীতিকের মতে, আবুল কালাম তথা জালাল হাজীর পরিবার নারায়ণগঞ্জের জন্য ক্ষতিকর নয়।

জালাল হাজী পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম আবুল কাউসার আশা একাধারে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি। তার রাজনীতি শুরু ছাত্রদল দিয়ে। তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচনে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এ ওয়ার্ডটি বন্দর উপজেলার নবীগঞ্জ এলাকায়, এখানে জালাল হাজীর আদি বাড়ি। লোকে ‘বড় বাড়ি’ নামে চেনে। এ বড় বাড়ির ছোট ছেলে আশা’র বিরুদ্ধে সম্প্রতি ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি একটি মানববন্ধনে উপস্থিত বক্তারা বলেন, মাদক ও ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় আশার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। প্রভাবশালীদের ইন্ধনে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, পুলিশের ধাওয়ায় ডোবায় পরে যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় আশার নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। কাউন্সিলর আশার মতে, তার কাছে হেরে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবকলীগের বিলুপ্ত মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল প্রধানের আত্মীয় হলেন নিহত যুবক। সে-ই ওই যুবকের পরিবারকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছে।

একসময়ে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান জানান, পাকিস্তান আমলে সারাদেশে ছাত্রলীগ নেতাদের নামে মামলা হয়েছিলো। তখন আমিসহ নারায়ণগঞ্জের অনেককে আসামী করা হয়েছে। ওই সময়ে মুসলিম লীগ করেও জালাল হাজী জামিনদার হয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের জামিনে মুক্ত করেছিলেন। তার মতে, রাজনীতিতে মদ আদর্শ নিয়ে পার্থক্য থাকলেও জালাল হাজীর পরিবার কখনও ক্ষতিকর ছিলো না। একই রকম কথা বলেছেন আওয়ামীলীগ ও বিএনপির স্থানীয় অনেকে।