আজ বৃহস্পতিবার, ১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চুল সোজা করার ঘরোয়া পদ্ধতি

১: মুলতানি মাটি : মুলতানি মাটি প্রাকৃতিকভাবে চুলকে সোজা রাখতে পারে। আধা কাপের মতো মুলতানি মাটি সামান্য তরল দুধের সাথে মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরী করুন। এই প্যাক চুলে লাগিয়ে রাখুন বিশ মিনিটের মতো। এরপর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন এই প্যাক ব্যবহার করুন। অথবা ডিমের সাদা অংশের সাথে ও মুলতানি মাটি দিয়ে প্যাক তৈরী করে চুলে লাগাতে পারেন। অথবা ঝামেলা এড়াতে শুধু মুলতানি মাটি ও ব্যবহার করা যাবে। তবে এতে ফল একটু দেরিতে পাবেন

২: এলোভেরা : এলোভেরার অনেক গুণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো চুল সোজা করার ক্ষমতা। এলোভেরাতে আছে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যা, স্বাভাবিক নিয়মেই চুল সোজা রাখতে পারে। সরাসরি চুলে এলোভেরার রস লাগিয়ে নিতে পারেন। অথবা যেকোন ধরনের তেলের সাথে এলোভেরার রস (বেশি পরিমাণে) লাগিয়ে নিতে পারেন। রেগুলার এলোভেরার রস ব্যবহারে আপনার চুল পড়ার সমস্যাও কমবে।

৩: হট অয়েল ট্রিটম্যান্ট : হট অয়েল ম্যাসেজিং চুল সোজা রাখার আরেকটি অন্যতম পদ্ধতি । চুলে সাধারনত তেল তো দেওয়াই হয়, তেল লাগানোর আগে তা সামান্য গরম করে চুলে বিশ মিনিটের মতো ম্যাসেজ করে নিন। এক থেকে দেড় ঘন্টা পর যেকোন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে সাত দিনও এই পদ্ধতি কাজে লাগান কোন সমস্যা নেই। তিলের তেল, নারিকেল তেল ও আমন্ড অয়েল হট অয়েল ট্রিটম্যান্টের জন্য সেরা।

৪: নারিকেল দুধ : চুল সোজা করতে, আরেকটি দারুণ কাজের উপাদান হলো নারিকেল দুধ। নারিকেল দুধের ময়েশ্চারাইজিং ক্ষমতা চুলকে কোমল – ও মোলায়েম করে তুলে যার ফলে চুল সোজা থাকে এবং চুলে বাড়তি একটা চমক আসে। এজন্য যা করতে হবে :

একটি পরিষ্কার গ্লাসে এক কাপ ফ্রেশ নারিকেল দুধ নিন। এতে আধা কাপ লেবুর রস মিশিয়ে নিন (খুব ভালো করে মিশাতে হবে) এরপর কয়েক ঘন্টার জন্য গ্লাসটি ফ্রিজে রেখে দিন। যখন দেখবেন নারিকেল দুধ জমে গেছে তখন উপর থেকে ঘন মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে নিতে হবে। ঘন করে এ মিশ্রণ লাগিয়ে চুলে বিশ মিনিটের মতো রেখে দিন। এরপর চুল ধুয়ে নিন। চাইলে এই মিশ্রণে সামান্য দই ও মিশিয়ে নিতে পারবেন।

৫: দুধ : দুধে উপস্থিত প্রোটিন ও ময়েশচারাইজার আপনার চুলে পুষ্টি যোগিয়ে চুলকে রাখবে সোজা ও মসৃন।

পদ্ধতি এক : একটি বোতলে সামান্য পানি ও তরল দুধ একসাথে মিশিয়ে চুলে স্প্রে করুন। একটু একটু করে চুল আঁচড়াতে থাকুন ও চুলে স্প্রে করতে থাকুন। এরপর চুল যখন সব দুধ শুষে শুকিয়ে যাবে তখন, হালকা গরম পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। দুধের পুষ্টি দুর্বল চুলকেও মজবুত করে তুলবে।

পদ্ধতি দুই : এক গ্লাস দুধের সাথে স্ট্রবেরী ম্যাশ করে মিশিয়ে নিন। এবার এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। খুব ভালো করে প্যাক তৈরী করুন। চুলে লাগিয়ে রেখে দিন আধা ঘন্টার মতো শ্যাম্পু করার আগে চুল ভালো করে আঁচড়ে নিন।

৬: ডিম ও অলিভ অয়েল: ডিম চুলকে মজবুত রাখে ও অলিভ চুলে বাড়তি শাইন আনে, কিন্তু এই দুইয়ের মিশ্রণে চুল করতে পারেন সোজা !

যা করতে হবে,

দুটো ডিম খুব ভালো করে ফেঁটে নিন । এর সাথে তিন টেবিল চামচ অলিভ অযেল মিশিয়ে নিন। চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত খুব ভালো করে এই প্যাক লিগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ পরে নিলে ভালো। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে নিন সপ্তাহে অন্তত দু বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।

৭: ভিনেগার: চুল সোজা করতে ভালো কাজ করে এই উপাদান। ভিনেগারের মতো ভালো ন্যাচারাল কন্ডিশনার আর কিছু হতে পারে না। এর ন্যাচারাল কন্ডিশনিং ক্ষমতা চুলকে সোজা রাখবে। এক মগ পানিতে এক ক্যাপ ভিনেগার মিশিয়ে নিন। শ্যাম্পু করা পর এই পানি মাথায় ঢেলে দিন। ব্যাস !

৮: ক্যাস্টর অয়েল: ক্যাস্টর অয়েলও চুলকে সোজা করতে কাজ করে । নিয়মিত কুসুম গরম ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করুন। কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই চুল সোজা থাকবে। অথবা আমন্ড অয়েলের সাথে ও এই তেল মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করুন।

৯: কলা : পাঁকা কলাও চুল সোজা রাখতে দারুণ কার্যকর। যা করতে হবে :

একটি বা দুটি পাঁকা কলা নিন। একটি চামচের সাহায্যে কলা গুলো স্ম্যাশ করে নিন। এতে এক টেবিল চামচ মধু, এক টেবিল চামচ দই ও সামান্য অলিভ অয়েল মিশিয়ে প্যাক তৈরী করুন। এবার এই প্যাক চুলে এক ঘন্টার মতো লাগিয়ে রাখুন। ওই প্যাক চুলে ভেতর থেকে পুষ্টি যোগাবে যার ফলে চুল সোজা থাকবে।

১০: পেঁপে : পেঁপেও চুল প্রাকৃতিক ভাবে সোজা রাখতে কার্যকর। একটি পাঁকা পেঁপে নিন (আন্দাজমতো) এর সাথে দই ও মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরী করুন। চুলে এই প্যাক নিয়মিত লাগালে ভালো ফল পাবেন।

১১: স্যালারি পাতা : সালাদে তো সবসময়ই স্যালারি পাতা খাওয়া হয়। ভেবে দেখুন তো কিভাবে এই পাতাই আপনার প্রিয় চুলগুলোকে রাখবে সোজা ! কিভাবে দেখে নিন …

পরিমাণমতো স্যালারি পাতা নিন । এই পাতার রস বের করে একটি কাঁচের পাত্রে করে সারারাত ফ্রিজে রেখে দিন। পরের দিন চুলের অগা থেকে গোড়া পর্যন্ত এই রস লাগিয়ে নিন। ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ে নিন।চুল শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক নিয়মে শ্যাম্পু করে নিন।

১২: চালের গুড়া ও ডিম : দুটি ডিমে ভালো করে ফেটে নিন। এর সাথে তিন টেবিল চামচ মুলতানি মাটি ও পাঁচ টেবিল চামচ চালের গুড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরী করে চুলে লাগিয়ে রেখে দিন। আধা থেকে এক ঘন্টার মতে। এরপর যেকোন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।

উপরের দেওয়া প্যাকগুলো সপ্তাহে তিন থেকে চার দিনের মতো ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এতে মাস জুড়েই আপনার চুল প্রাকৃতিক ভাবে সোজা থাকবে।

এছাড়াও মনে রাখুন আরো কিছু ব্যাপার :

# যেকোন ধরনের তেলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাসুল ব্যবহার করলে আপনার চুল ভেতর থেকে পুষ্টি পাবে।

# চুল সোজা রাখতে ভালো মানের কন্ডিশনার রেগুলার ব্যবহার করতে পারেন।

# বাইরে থেকে নয় বরং চুল ভেতর থেকেই ময়েশ্চারাইজার শোষন করে। তাই বেশি করে শাক সবজী ও পানি খেতে হবে। মসলা বা অতিরিক্ত তেল এড়িয়ে চলুন। কেননা এগুলো চুলে বিরূপ প্রভাব ফেলে।

# সপ্তাহে অন্তত তিন দিন চুলে হেয়ার অয়েল ম্যাসেজ করুন। কারণ চুলের যত্নে সবার আগে তেল ব্যাপারটাই আসে। এর কোন বিকল্প নেই অর হবেও না।

# ক্যামিকেল যুক্ত হেয়ার কালার এড়িয়ে চলুন। রিবন্ডিংকে না বলুন। একান্তই চুল রঙ করতে চাইলে বাটা মেহদী ব্যবহর করতে পারেন।

# ভেজা চুল খুব জোরে আঁচড়াবেন না।