আজ রবিবার, ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

চাষাঢ়ায় ভাড়াটিয়াকে খুন করলো নেতার বাবা

নিজস্ব সংবাদদাতা
শহরের চাষাঢ়া রূপায়ণ টাউওয়ারের সামনে বিদ্যুৎ বিলের পাওনা নিয়ে তর্কের জেরে সিরাজুল ইসলাম নামের এক বৃদ্ধকে শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি। সে স্থানীয় একটি বাড়ির মালিক ও জেলা যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহ ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজের বাবা। সিরাজুল আগে তার বাড়িতে ভাড়া থাকতো। ওই সময়ে ৩৬শ’ টাকা বিদ্যুত বিল দেয়নি বলে বিভিন্ন সময়ে তাকে আটকে রাখতো ফয়েজের বাবা। বৃহস্পতিবার সে ও তার দারোয়াস তার মাথায় আঘাত করলে মারাত্মক জখম হয়। শুক্রবার ওই ব্যক্তি মারা যায়।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানায়, শাহজাহান ১ দিন পূর্বে বকেয়াকৃত ৩ হাজার ৬‘শ টাকা বিদ্যুৎ বিলের জন্য নিহত ওই ব্যক্তির মাথায় আঘাত করে এবং তার বাড়ির দারোয়ান পিটিয়ে জখম করে। পরে তিনি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ছোট ছেলের বাড়িত ছিলেন। শুক্রবার জামতলার সেই বাড়িতে বৃদ্ধার অবস্থার আরও অবনতি হলে হলে তিনি মারা যান।
সিরাজুল ইসলামের জামাতা জসিম উদ্দিন জানান, ৭ থেকে ৮ বছর পূর্বে তার শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম রূপায়ণ টাওয়ারের পাশে শাহজাহান মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাড়ির বিদ্যুৎ বিল বাবদ বকেয়া তিন হাজার ছয়শ’ টাকা পাবেন বলে দাবি করে আসছিলেন বাড়িওয়ালা। বৃহস্পতিবার তার বৃদ্ধ শ্বশুরকে ডেকে নিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেন শাহজাহান। এলোপাতাড়ি পিটুনিতে বৃদ্ধ পিঠে, কানে ও বুকের পাঁজরে গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হন। এ পর বাড়ির মালিক শাজাহান পালিয়ে গেলে স্বজনরা তার শ্বশুরকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে চিকিৎসা দিয়ে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার বিকেলে জামতলা হাজী ব্রাদার্স রোডের ভাড়া বাসায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। নিহতের জামাতা আরও জানান, শাহজাহান ও তার বাড়ির দারোয়ান মিলে তার শ্বশুর সিরাজুল ইসলামকে হত্যা করেছে।
এদিকে যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক শাহ ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ জানান, অনেক আগে নিহত সিরাজুল ইসলাম তাদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। তার কাছে কিছু টাকা বকেয়া ছিলো। সে টাকা তার বাবা প্রায় সময় চাইতেন। ফয়েজ জানান, আমরা বাবাকে অনেকবার বলেছি তিনি যেন টাকা না চায়। তার বাবা বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ায় স্মরণশক্তি কমে গেছে। একই সাথে তিনি কারোও কথা শুনেন না। বৃহস্পতিবার নিহত সিরাজুল ইসলাম কে সামনে পেয়ে টাকা চায়। কিছুক্ষন পর ওই ব্যক্তির মাথার পেছনে তার বাবা আঘাত করে বলে জানান ফয়েজ। তিনি আরও জানান, এটি একটি দূর্ঘটনা। আমরা হাসপাতালে সিরাজুল ইসলামের খোঁজ খবর নিয়েছি। সেখানে চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকাও পাঠিয়েছি। ফয়েজ বলেন, যেহেতু ওনি মারা গেছেন সেহেতু আইন যা বলবে তাই হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ফতুল্লা মডেল থানার এসআই শরীফুল হক জানান, বৃহস্পতিবার বকেয়া ভাড়ার জন্যই সিরাজুল ইসলামকে পেটানো হয়েছিল।

এ ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসলাম হোসেন জানান, বাড়িওয়ালা দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়া এক ভাড়াটে বৃদ্ধের মৃত্যুর হয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের স্ত্রী হাসিনা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। ওসি আরও জানান, লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।। নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ।
এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, ফয়েজের বাবা ছেলের রাজনৈতিক পরিচয়ের প্রভাবে এলাকায় বেশ দাপটের সাথে চলাফেরা করেন। যে কারণে ভাড়াটে বৃদ্ধের উপর এই নির্যাতনের প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি এলাকার কেউই। শাহ ফয়েজ উল্লাহ ফয়েজ নিজেও বিভিন্ন সময়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে বেশ সমালোচিত হয়েছেন।