সংবাদচর্চা রিপোর্ট :
জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে গতকাল ঘোষণা করা হয়েছে সদর উপজেলা নির্বাচনী তফসিল। আগামী ৪ মে এই উপজেলা পরিষদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা ১৫ এপ্রিল এবং যাচাই বাছাই ১৭ এপ্রিল। এবং ২২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দেন নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে পনের বছর এই উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা একটু বেশিই কাজ করছে। ফলে এই উপজেলায় কে প্রার্থী হবেনÑ তা নিয়ে আগ্রহটা একটু বেশিই কাজ করছে উপজেলাজুড়ে।
এই উপজেলা পরিষদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে চারজনের নামই বেশ জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে। তারা হচ্ছেন, ইব্রাহিম চেঙ্গিস, নাজিমউদ্দিন, শাহ্ নিজাম এবং শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু। তবে, এই চারজনের মধ্যে শেষের দুজনকে নিয়েই সর্বোচ্চ আলোচনা হচ্ছে ভোটের মাঠে। যদিও তারা চারজনই শামীম ওসমান অনুসারি। এবং প্রভাবশালী এই সাংসদের সমর্থন প্রত্যাশী।
এদিকে আলোচনা চলছে, এই চারজন থেকে একজনকে বেছে নিবেন নাকি এই চারজনের বাইরে অন্যকোনো ব্যক্তিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিবেন শামীম ওসমানÑ এই আলোচনা এখন সর্বত্র চলছে। কারো কারো মতে, সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যে চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের বাইরে বিশেষ করে ওসমান পরিবারের কোনো ব্যক্তিকে উপজেলা নির্বাচনে সমর্থন দেওয়া হতে পারে। সেই আলোচনায় উঠে আসছে শামীম ওসমানের সহধর্মীনি সালাম ওসমান লিপির নাম। তবে এই আলোচনা শোনা গেলেও এর কোনো সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি। আদতে সালমা ওসমান লিপি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হবেন কিনা বা ওসমান পরিবার তাকে বেছে নিবেন কিনাÑ এ নিয়ে বিস্তুর আলোচনা চলছে মাঠে।
এই আলোচনায় শোনা যাচ্ছে, সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যে চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে যদি একজনকে সমর্থন দেওয়া হয় তাহলে ওসমান বলয়ে ফাটল সৃষ্টি হতে পারে। ফলে এই ফাটল ও দ্বন্দ্ব যাতে প্রকাশ্যে না আসে সে ক্ষেত্রে তাদের বাইরে অন্য কাউকে বেছে নেওয়া হতে পারে। যদিও আলোচনায় শোনা যাচ্ছে, শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ সিনিয়র অনেক নেতাই সালমা ওসমান লিপিকেই চেয়ারম্যান হিসেবে প্রত্যাশা করছেন। তাকে সমর্থন দিলে অন্যরা এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়াবেন না এমন যুক্তিই তারা দিচ্ছেন। তবে এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি ওসমান পরিবার থেকে।
এদিকে ওসমান পরিবারের বিশ^স্ত হিসেবে সবার কাছেই পরিচিত মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ্ নিজাম। বিশেষ করে তিনি শামীম ওসমানের একনিষ্ঠ অনুসারি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অপেক্ষায় রয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শামীম ওসমান তথা দলীয় সমর্থন তিনিই পাবেন। তবে এখনও পর্যন্ত শামীম ওসমানের পক্ষ থেকে তাকে কোনো গ্রিণসিগন্যাল দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত তিনি সমর্থন পাবেন কিনাÑ এ নিয়ে রয়েছে বেশ আলোচনা। তবে ব্যক্তি শাহ্ নিজাম অনুসারিদের মতে, শামীম ওসমানের কর্মীদের মধ্যে সব থেকে বেশি বিশ^স্ত শাহ্ নিজাম। তাকে শামীম ওসমানের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ বলা হয়ে থাকে। সে হিসেবে শামীম ওসমানের সমর্থনটা তারই প্রাপ্য বলে মনে করেন তারা।
তবে, সাধারণ নেতাকর্মী, সমর্থক থেকে শুরু করে ভোটের মাঠের হিসেবটা একটু ভিন্ন। তারা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক যার রয়েছে বা স্থাপন হবে তেমন একজনকে যদি সমর্থন দেওয়া হয় তাহলে নির্বাচনে ভোটের পার্সেন্টিস বাড়বে। অন্যথায় জাতীয় নির্বাচন এবং সর্বশেষ ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনের মতো সদর উপজেলা পরিষদের ভোটের পার্সেন্টিস হওয়া সম্ভাবনা বেশি। যদি ভোটের পার্সেন্টিস বাড়ানো না যায় তাহলে ওসমান পরিবার বিশেষ করে শামীম ওসমানের প্রতি নাখোশ হবে কেন্দ্র। কেননা, কেন্দ্র উৎসবমুখর একটি ভোট প্রত্যাশা করছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি নির্বাচন তারা প্রত্যাশা করছেন বলেই এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বা দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
সূত্র বলছে, শাহ্ নিজামকে যদি দলীয়ভাবে শামীম ওসমান সমর্থন দেন তাহলে ভোটের পার্সেন্টিস বাড়ানো সম্ভব হবে না। কেননা তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিবিড় সম্পর্ক নেই। পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের বিতর্কে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের তার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। সর্বশেষ নম পার্কে লাকী কুপন চালানোর ঘটনায় এই নেতা বেশ ভালোভাবেই ইমেজ সঙ্কটে পড়েছেন। তবে তার বিপরীত দিকে রয়েছেন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাওয়া শাহদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু।
সূত্র বলছে, সাজনুও শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ও বিশ^স্ত একজন কর্মী। তবে তাকে ঘিরে বিগত দিনগুলোতে কোনো রকম বিতর্ক নেই। বিতর্কমুক্ত যুবলীগের এই নেতার সঙ্গে সাধারণ মানুষের রয়েছে নিবিড় একটা সম্পর্ক। সাধারণ মানুষের মধ্যে নিয়মিত তার যাতায়তও রয়েছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সময়ে দুঃস্থদের পাশে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানোর প্রবণতা তার মধ্যে বিদ্যমান। করোনা, ঈদ, রোজা, পূজা থেকে শুরু করে বিশেষ দিন ও দুর্যোগকালিন মুহূর্তেও সাজনুকে পাশে পেয়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে ধারণা করা হচ্ছে সাজনু কিংবা তার মত এমন কোনো ব্যক্তিকে যদি প্রার্থী করা হয়, সমর্থন দেওয়া হয় তাহলে ভোটের পার্সেন্টিস অনেক বেশি বাড়বে। সাধারণ মানুষও এমন ব্যক্তিকে সাদরে গ্রহণ করে নিবে।
তবে এখন দেখার বিষয় শামীম ওসমান কি সিদ্ধান্ত নেন। কাকে তিনি সমর্থন দেন। যে চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে কাউকে বেছে নিবেন নাকি নতুন করে আলোচনায় আসা তার সহধর্মীনি সালমা ওসমান লিপিকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিবেন। তবে, নির্বাচনটাকে উৎসবমুখর করতে চাইলে, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে চাইলে কাউকে সমর্থন না দিয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা গেলে সাধারণ মানুষ সব থেকে বেশি খুশি হবেন বলেই জানা গেছে।