নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ নয় বছর পর এশিয়ার বাইরে বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয় করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসছে গোটা বাঙালি জাতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের মাধ্যমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ অবস্থিত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সকল পরিচালক ও খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর বিপক্ষে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের পেছনে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যে অন্যতম বিসিবির পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা। গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ডের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। যার নেতৃত্বে মুগ্ধ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। তিনি খেলেন না কিন্তু খেলোয়াড়দের খেলাতে উৎসাহ উদ্দীপনা দেন এবং দলকে সিরিজ জেতান। হাজারো হতাশার মাঝেও তার উপস্থিতিতেই বদলে যায় বাংলাদেশ ।
টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশের কঠিন স্মৃতি ভুলে রঙিন পোশাকে বাংলাদেশের সিরিজ জয় করাটা ছিলো অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের সেই চ্যালেঞ্জে আশার আলো দেখালেন বিসিবির পরিচালক তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা। হতাশার পরাজয়ে ডুবে থাকা দলটিকে আবারও টেনে তুললেন পরামর্শে এবং দক্ষ নেতৃত্বে। তার উপস্থিতিতেই উজ্জ্বীবিত করে রাখলো পুরো টাইগার শিবিরকে।
এই সিরিজে তাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অবজার্ভার হিসেবে পাঠায়। কিন্তু টেস্ট সিরিজে বাজে পারফরমেন্সে নেতিয়ে পড়া দলকে মনোবল ফেরানোর তাগিদকেই বেশি অগ্রাধিকার দেন বিসিবির পরিচালক। দলে এসেই বদলে দেন খেলোয়াড়দের পারফমেন্স।
একদিনের ম্যাচে সিরিজ জয়ের দিন মাঠে নামার আগে খেলোয়াড়দের বলেন, তোমাদের দিকে পুরো জাতি তাকিয়ে আছে । তোমাদের হতাশ হওয়া যাবে না । দেশের জন্য তোমাদের সর্বোচ্চ খেলাটা উপহার দিতে হবে। তোমাদের সিরিজ জয় করতেই হবে। পরিচালকের কথারই প্রতিফলন দেখান ক্রিকেটাররা।
গোলাম মর্তুজা পাপ্পা ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং কোচের সাথে পরামর্শ করে দলে পরিবর্তন এনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এর বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে প্রথম একাদশ ঘোষণা করে।
ব্যাট-বলে পুরো দলের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স । দীর্ঘ ৯ বছর পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের আনন্দ পেল বাংলাদেশ। গোলাম মর্তুজা পাপ্পার অক্লান্ত পরিশ্রমে খেলোয়াড় দের কল্যাণে তীরে এসে তরী এবার আর ডোবেনি। ব্যাটে-বলে অনবদ্য খেলা উপহার দিয়ে জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা। শনিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ১৮ রানে জিতে ২-১-এ সিরিজ জয় করেছে টাইগার বাহিনী। এ সিরিজ জয়ে বিসিবির পরিচালম গোলাম মর্তুজা পাপ্পার অবদান ভুলবার নয়।
প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানে জিতেছিল টাইগাররা। দ্বিতীয় ম্যাচে মাত্র ৩ রানে হেরে যাওয়ায় সেদিন সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়নি। তবে অঘোষিত ফাইনালে দারুণ এক জয়ে সিরিজ নিজেদের করল টাইগাররা। তাতে দুই বছর পর সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলদেশ। আর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জয় ৯ বছর পর।এটা গোলাম মর্তুজা পাপ্পার দ্বারাই সম্ভব হয়েছে অন্য কেউ নয়। ২০০৯ সালে সর্বশেষ বিদেশে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
বিসিবির পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বাংলাদেশের ওয়ার্ডে ক্রিকেটের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে পরামর্শ দেন যে ব্যাটিং ক্রিজে টসে জিতলে আগে ব্যাটিং এর সিন্ধান্ত নিবে, টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি গোলাম মর্তুজা পাপ্পার পরামর্শে সারা দিয়ে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিন্ধান্ত নেয়।
সেন্ট কিটসের মাঠে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩০১ রানের বিশাল স্কোর করে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে যা টাইগারদের সর্বোচ্চ ইনিংস। তামিম ইকবাল এদিনও করলেন সেঞ্চুরি। প্রথম ওয়ানডেতেও যার ব্যাট থেকে এসেছিল সেঞ্চুরি। ফিফটি করলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিততে হলে করতে হতো রেকর্ড। কারণ ওয়ার্নার পার্কে ৩০০ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কখনো। ক্যারিবীয়রাও পারেনি এদিন। ক্রিস গেইলও পারলেন না টাইগারদের সাথে।এরপর সাই হোপ ও রোভমান পাওয়েল দারুণ চেষ্টা করলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাসি বাংলাদেশের।
সিরিজ জয়ের পর্বটা গায়ানাতেই সেড়ে রাখতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শেষ লড়াই করেই মাত্র ৩ রানে নাটকীয়ভাবে হারে বাংলাদেশ। তার আগে গায়ানাতেই প্রথম ওয়ানডেতে ৪৮ রানের দারুণ জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশের। সিরিজে ১-১ এ সমতা নিয়ে এদিন দুই দল খেলতে নামল। সেন্ট কিটস বলে একটু ভয় ছিল। কিন্তু এখানেও গোলাম মর্তুজা পাপ্পার বিশেষ পরামর্শে গায়ানার দুর্দান্ত বাংলাদেশকেই খুঁজে পাওয়া গেল সেন্ট কিটসে। বরং বলে ভালো গায়ানার চেয়েও আরো দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ। তাইতো গায়ানায় প্রথম ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টাইগাররা নিজেদের সর্বোচ্চ রানের স্কোর গড়ার পর এদিন সেটি নতুন করে লিখল বাংলাদেশ। শেষ ওভারে দারুণ বল করলেন রুবেল, মোস্তাফিজ। যেখানে রোভমান পাওয়েল ভয় ধরাচ্ছিলেন। তবে রুবেল-মোস্তাফিজরা শেষ তিন ওভারে ভালো বল করেছিলো।
জিততে হলে শেষ ১০ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে করতে হতো ১০৯ রান। হাতে ৬ উইকেট। বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তবে সাই হোপ তখন ব্যাট করছেন ৫৬ রানে। অন্য প্রান্তে খুনে মেজাজে রোভমান পাওয়েল। তখন মাশরাফিকে গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বিশেষ পরামর্শ দেন তার পর মাশরাফি ৪৪তম ওভারে হোপকে ফেরান। কিন্তু রোভমান পাওয়েল শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থেকে গেছেন। তবে শেষ ওভারগুলোতে তাকে অতিদানবীয় হতে দেননি রুবেল-মোস্তাফিজরা।
শেষ ৩ ওভারে ক্যারিবীয়দের সামনে সমীকরণে দাঁড়ায় ৪০ রানের। মোস্তাফিজ ৪৮তম ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে হোল্ডারের উইকেট নেন। ৪৯তম ওভারে রুবেল হোসেনও খরচ করেন মাত্র ৬ রান। তাতে শেষ ওভারে জিততে ক্যারিবীয়দের দরকার পড়ে ২৮ রান। মোস্তাাফিজের প্রথম বলে ছক্কা মেরে রোভমান পাওয়েল ভয় ধরালেন। কিন্তু এরপর আর পারেননি অমন কিছু করতে। মোস্তাফিজ পরের ৫ বলে ব্যয় করেছেন মাত্র ৩ রান। তাতেই দারুণ জয় টাইগারদের।
শুরুতে গেইল ভয় ধরিয়েছিলেন। ৭৩ রান করেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব। যাকে ফেরান রুবেল। তার আগে লুইসকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন মাশরাফী। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ২ উইকেট মাশরাফিরই। ১টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাাফিজুর রহমান ও রুবেল হোসেন।
গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পার পরামর্শে ব্যাটিং এ জ্বলে ওঠেন তামিম সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহরা। তামিম ইকবাল টানা তিন ম্যাচে ছিলেন দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ১৩০। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫৪ রান। এ ম্যাচেও করলেন সেঞ্চুরি। ১২৪ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন এই ড্যাশিং ওপেনার। যা তার ক্যারিয়ারের একাদশ ফিফটি। আর সিরিজে ২৮৭ রান করে করলেন রেকর্ড। তিন ম্যাচের সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিদেশি কোনো দলের হয়ে যা সর্বোচ্চ।
এরপর মাহমুদউল্লাহর পাঁচ নম্বরে নেমে যিনি ৪৯ বলে ৬৭ রানের অপরাজিত এক ইনিংস খেলেছেন। ৫ চার ও ৩ ছক্কায় সাজিয়েছেন তার ইনিংস। কৃতিত্ব গোলাম মর্তুজা পাপ্পার এবং সাকিব আল হাসান , মাশরাফী বিন মোর্ত্তজারও। সাকিব ৩৭ রান করার পথে তামিম ইকবালের সাথে আবারো তৃতীয় উইকেটে উপহার দিয়েছেন দারুণ জুটি। এদিন ৮১ রান উপহার দেন এই দুজন। আর সাব্বির ও মোসাদ্দেককে নিচে নামিয়ে মাশরাফী খেলতে নেমেছিলেন ছয় নম্বরে। ২৫ বলে ১ ছক্কা ও ৪ চারে ৩৬ রান করেছেন তিনি। তাতে ৩০০ পেরোনো সংগ্রহ পায় বাংলাদেশের।
নয় বছর আগে বাংলাদেশ বিদেশে সর্বশেষ সিরিজটি জিতেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে। এবার অবশ্য প্রথম সারির উইন্ডিজদের হারিয়েই ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ নিল বাংলাদেশ।
দারুণ জয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল। প্রথম ওয়ানডেতেও ম্যাচ সেরা ছিলেন তিনি। পুরো সিরিজে দুর্দান্ত খেলে সিরিজ সেরাও হয়েছেন তামিম ইকবাল।
উল্লেখ্য যে নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য রণাঙ্গণের খেতাব প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা বিশিষ্ট শিল্পপতি গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এর পুত্র বিসিবির পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। গত কাল বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের ম্যাচে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গোলামা মর্তুজা পাপ্পা।ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ ও ম্যান অফ দ্যা সিরিজের দুটা পুরস্কার তামিম ইকবালের হাতে তুলে দেন তিনি।
সিরিজ জয়ের পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পা এক নৈশভোজের আয়োজন করে। সে নৈশভোজে সকল খেলোয়াড় ও কোচ সহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেয়।
বিসিবির তরুণ পরিচালক গোলাম মর্তুজা পাপ্পা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। দক্ষ এবং মেধাবী খেলোয়াড় বাছায়ে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার জন্য আজ বাংলাদেশ ধন্য। তার দক্ষ নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্রিকেটে বহি:বিশ্বে আজ সুনাম অর্জন করছে।