আজ শনিবার, ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

গাজী টায়ারে আগুন: গণশুনানিতে নিখোঁজের স্বজনদের কান্না

টি.আই.আরিফ

রূপগঞ্জের রূপসীতে গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিখোঁজ ৮০ জনের তালিকা করেছে জেলা প্রশাসন গঠিত ৮ সদস্যের তদন্ত কমিটি।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কারখানাটির ভেতরে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের নিয়ে অনুষ্ঠিত গণশুনানিতে এ তালিকা তৈরি করা হয়।
এসময় স্বজনদের কাছ থেকে নিখোঁজদের ছবি সংগ্রহ ও নাম-ঠিকানা লিপিবদ্ধসহ তাদের সবশেষ অবস্থান জানতে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে নানাভাবে পর্যবেক্ষণ করে তদন্ত কমিটি।
গণশুনানি কার্যক্রম শেষে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিট্রেট হামিদুর রহমান সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ‘আমরা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, নিখোঁজদের স্বজন ও কারখানার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাদের কাছ থেকে আদ্যোপান্ত তথ্য সংগ্রহ করেছি। আমরা স্বজনদের দেয়া নাম-ঠিকানা অনুযায়ী নিখোঁজ ৮০ জনের তালিকা তৈরি করেছি। এছাড়া এ ঘটনায় এরআগে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার তৈরি করা তালিকাগুলো যাচাই-বাছাই করে নিখোঁজদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করব। এরপর ১০ কার্য দিবসের মধ্যে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।’

এদিকে গণশুনানি চলাকালে নিখোঁজদের সন্ধানের দাবিতে কারখানার সামনে প্রায় ১৫ মিনিট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা। এ সময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা বুঝিয়ে অবরোধকারীদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে আনেন। পরে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। নিখোঁজ শাহাদাত শিকদার, শাব্বির শিকদারের বোন রাহিমা রোমানা বিকালে কিছু পোড়া হাড়, মাথার খুলি কারখানার ভিতর থেকে নিয়ে এসে সাংবাদিকদের দেখান। তিনি বলেন ,আমি গাজী টায়ার কারখানার ভিতর থেকে হাড় দেখে নিয়ে এসেছি। ৩য় ও ৪র্থ তলায় তল্লাশি করা দরকার, সেখানে লাশ থাকতে পারে। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফা রাসেল মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন। এরপর নিখোঁজের স্বজনদের কারখানার সামনে ভিড় করতে দেখা যায়। অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ,বিজিবি,সেনাবাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছে।

গাজী টায়ার কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর কারখানার সামনে খুঁজতে আসা স্বজনদের কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে কারখানার পরিবেশ। চোখের জলে সিক্ত হয়ে উঠেছে কারখানা। কেউ ডুকরে কাঁদছেন। কেউ স্বজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছেন। একজন আরেকজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো সান্ত্বনাতেই তাদের কান্না থামানো যাচ্ছে না।

নিখোঁজ দড়িকান্দি এলাকার মামুনের মেয়ে স্কুল ছাত্রী রাইসা গণশুনানিতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, আমার আব্বুরে ফিরে দেন, প্রয়োজনে আমরা মরবো তবু আমাগো লোক ফিরে দেন।
নিখোঁজ রিনার স্বামী মীর আতিকুর বলেন, কারখানার তৃতীয় তলায় তল্লাশী করলে অনেক লাশ পাবে। আমার স্ত্রীর সন্ধ্যান চাই আমি।

গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে আট সদস্যের তদন্ত কমিটির উপস্থিতিতে আগুনে পোড়া ছয় তলা ভবনটি পরিদর্শন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপকসহ বিশেষজ্ঞ কয়েকজন প্রকৌশলী। ল্যাডার মেশিনে উঠে প্রতিটি তলায় ড্রোনের মাধ্যমে তল্লাশি শেষে বুয়েটের অধ্যাপক সাংবাদিকদের জানান, উপরের তিনটি তলার ছাদ ধসে পড়ায় ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় পুরো ভবন ধসে পড়তে পারে। তবে তার পরামর্শে নীচতলার বেইজমেন্টে ফায়ার সার্ভিস তল্লাশি করে কোনো লাশ বা মানবদেহের অংশবিশেষ পাননি।

প্রসঙ্গত গত ২৫ আগস্ট গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেফতারের পর রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা। এ সময় সহস্রাধিক মানুষ গাজী টায়ার কারখানার ভেতরে প্রবেশ করে মেশিনপত্র ও আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী লুটপাট করে। রাত নয়টার দিকে দুর্বৃত্তরা কারখানাটিতে আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে শতাধিক মানুষ আটকা পড়েন বলে দাবি করে আসছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। প্রাথমিক তালিকার ১৭৫ জনের মধ্যে গতকাল গণশুনানিতে ৮০ জনের স্বজনদের সাথে কথা বলেন তদন্ত কমিটি।