আজ শনিবার, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

খেলারামের ভেলকিবাজি

স্টাফ রিপোর্টার :

দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নির্বাচন নেই নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায়। এতে ভোটের অধিকার থেকে শুরু করে কাঙ্খিত সেবা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন সদর উপজেলার বাসিন্দারা। এ নিয়ে আক্ষেপ-অভিযোগের অন্ত নেই স্থানীয় ভোটারদের। তারা বলছেন, নিয়ম মাফিক নির্বাচন হলে উপজেলা পরিষদের সঠিক সেবা পেতেন নির্বিঘ্নে। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন আসলেই একটি পক্ষ নিজ স্বার্থে তা বঞ্চালের চেষ্টা করে গেছে বারংবার। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রথম ধাপের তফসিল অনুযায়ী আগামী ৮ই মে সদর উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা নিয়ে শঙ্কা তৈরী হয়েছে। ২২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের এপিলেট ডিভিশনে মামলার শুনানি জনিত কারণে স্থগীত করা হয়েছে সদর উপজেলা নির্বাচনের সকল কার্যক্রম।
প্রবীন নেতারা বলছেন, এই নির্বাচনকে রুখে দিতে একটি পক্ষ পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। এতে বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ^াসকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন অনেকে। তবে আবুল কালাম আজাদ বিশ^াসের অনুগামীরা মামলার আবেদন করলেও এর পেছনে এক খেলারাম খেলে যাচ্ছেন বলেও সর্ব মহলে চাওর হচ্ছে। ওই খেলারাম প্রকাশ্যে না এলেও তার ইশারায় মামলাটি পরিচালনা হচ্ছে বলে কথিত আছে।
স্থানীয়রা বলছেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রভাবশালী এমপি শামীম ওসমান উদ্যোগী হলে আরও আগেই জটিলতার অবসান ঘটতো। সুগম হতো নির্বাচনের পথটাও। তবে, নির্বাচন হলে কাকে রেখে কাকে তুলে দেয়া হবে নৌকা; সেই জটিল হিসেবের কারণেই কী এযাৎ উদ্যোগী দেখা যায়নি প্রভাবশালী ওই এমপিকে? এমন প্রশ্ন ছিলো বহু পুরোনো।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সদর, ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ে গঠিত সদর উপজেলা। এই অঞ্চলে শামীম ওসমানের অনুগত আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে একটি বৃহৎ বলয় তৈরী হয়েছে। এই বলয়ের অধিকাংশ নেতাই চাইছেন সদর উপজেলার চেয়ারম্যানী পদ। এরই মাঝে শামীম ওসমানের অনুসারীদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহ-নিজাম ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি সাহাদাৎ হোসেন সাজনুর মাঝে প্রার্থীতা নিয়ে বৈরীতা শুরু হয়েছে। এতে ওসমান বলয়ে ভাঙন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা জেগেছে।
প্রবীণ নেতারা বলছেন, সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ^াস বিএনপি নেতা হলেও তিনি শামীম ওসমানের একজন ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রমাণিত করেছেন। তাই শামীম ওসমানও জটিলতায় না গিয়ে ‘পুতুল’ চেয়ারম্যান হিসেবে আজাদের উপরই এযাবৎ ভরসা করেছেন- এমন কথা বেশ প্রচলিত।
ৎএক্ষেত্রে নির্বাচন বাঞ্চাল হলে একদিকে যেমন আস্থাভাজন আজাদ বিশ^াসই চেয়ারম্যান থাকবেন, অন্যদিকে ওসমান বলয়ের ফাটলও থেমে যাবে। তাই নির্বাচন হওয়ার চেয়ে না হওয়াটাই কী শস্তিদায়ক শামীম ওসমানের জন্য? এমন প্রশ্ন উঠলেও তার ঘনিষ্ঠ কর্মীরা বলছেন, শামীম ওসমান এখন আগের চেয়েও অনেক পরিপক্ক রাজনীতিবীদ। নির্বাচন হলেও তিনি তার বলয়ে ফাটল ধরতে দিবেন না। নেতৃত্বগুণে তার জুড়ি মেলাভার। তাই নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে হয়তো মাথা ঘামাচ্ছেন না শামীম ওসমান।
যদিও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় শামীম ওসমান হলফ করেই বলেছেন, তিনি কনফার্ম সদর উপজেলার নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচন না হওয়ার বিষয়ে শামীম ওসমানের এই হলফ করা ভবিষ্যদ্বানী নিয়েও নানা আলোচনা ও গুঞ্জন রয়েছে।
তবে স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে একটি উপজেলায় নির্বাচন না হলে এর কর্মগতি থাকে না। স্থানীয় বাসিন্দারাও কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। যেমনটা তারা হয়ে এসেছেন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে। তাই সদর উপজেলা নির্বাচন এবার মনে প্রাণেই চাইছেন স্থানীয়রা। পর্দার আড়াল থেকে কেউ খেলে না গেলে আগামী ২২ এপ্রিল নির্বাচন হওয়ার পক্ষেই রায় আসতে পারে বলে মনে করছেন বোদ্ধা মহল।
তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এতে বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার সাথে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মধুর সম্পর্কের বিষয় নিয়ে উভয় দলের নেতাকর্মীরাও তিক্ত হয়ে উঠছেন। যদিও সীমানা সংক্রান্ত মামলার অজুহাতে নির্বাচন না হওয়ায় দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে উপজেলার চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, সদর উপজেলার কিছু এলাকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ায় ওই সব এলাকা বাদ দিয়ে উপজেলা পরিষদ আইন ১৯৯৮ (২০০৯ সনের ৩০ জুন সংশোধিত) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সদর উপজেলা পুর্নগঠন করে। ২০১৪ সালের ৪ মার্চ এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করা হয়। এদিকে কয়েকটি এলাকা বাদ দিয়ে উপজেলার নতুন সীমানা নির্ধারন হওয়ায় উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়। যার পিটিশন নং- ৩০৮৯। এ রিট করেন ফতুল্লা চৌধুরী বাড়ির মৃত সুলতান বক্স চৌধুরীর ছেলে মো. আসাদউদ্দিন চৌধুরী, পশ্চিম মাসদাইরের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে বজলুর রহমান ও কাশিপুর উত্তর গোয়ালবন্দের হেলালউদ্দিন মুন্সীর ছেলে মো. হামিম মুন্সী। রিট কারীদের প্রত্যেকেই যেমন উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের লোক হিসেবে পরিচিত, তেমনি বিএনপি নেতা হলেও আজাদ বিশ^াস এমপি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বা আস্থাভাজন হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। ফলে নির্বাচন না হওয়ার পেছনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের দূর্বলতা অনূভব করছেন বোদ্ধা মহল।

স্পন্সরেড আর্টিকেলঃ