আজ সোমবার, ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কাঙ্খিত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ফতুল্লাবাসী

# সিটি ভূক্ত করতে দেয়নি শামীম ওসমান
# অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ফতুল্লা
# চরম ভোগান্তিতে রয়েছে বিশ লাখ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বিগত আওয়ামী লীগের ষোল বছর ফতুল্লায় কাঙ্খিত কোন উন্নয়ন হয়নি। মূলত উন্নয়নের মুলা ঝুলিয়ে ফতুল্লাবাসীকে ঘুমের মধ্যে রেখেছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপি। তবে ফতুল্লাবাসীকে কিছু না দিলেও ফতুল্লা থেকে নিতে ভুল করেনি সাবেক এমপিদ্বয় এবং তার অনুসারিরা। শিল্পঅধ্যুষিত এলাকায় হচ্ছে ফতুল্লা। এই অঞ্চলে কয়েক লক্ষ শ্রমিক শিল্প কারখানায় কর্মরত। রয়েছে কোশিয়ারি, ডাইংসহ অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান। এখান থেকে সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। এই ফতুল্লায় প্রায় বিশ শাখ মানুষের বসবাস। জনবহুল এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এই এলাকায় কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এই এলাকার উন্নয়ন না করেছে প্রায়ত সাংসদ কবরী, না শামীম ওসমান। অথছ সুবিধা নিতে চুল পরিমান ভুল করেনি কবরী,শামীম ওসমান ও তাদের অনুসারিরা। উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকার পেছনে আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপিকে দায়ি মনে করছেন ফতুল্লাবাসী। শিল্প সমৃদ্ধ এই এলাকাকে উন্নয়নে কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই ভোটের রাজনীতি করেছে, কিন্তু উন্নয়নের রাজনীতি কেউ করেনি। কেউ উন্নয়নের কথা বলতে গেলেও তার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পরতেন কবরী,শামীম ওসমান। তাদের দু’জনের বাঁধার কারণে ফতুল্লা থেকে উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা অনেক এলাকা এগিয়ে রয়েছে। আলোকিত হয়েছে জালকুড়ির মতো অনুন্নত এলাকাও। ফতুল্লাবাসীর দাবি, আগামী দিনে যে এ এলাকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন, সে যেন ফতুল্লার উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ থানা হচ্ছে ফতুল্লা। গুরুত্বের দিক দিয়ে এ থানা জেলার শীর্ষে থাকলেও উন্নয়নের দিক দিয়ে এ থানা সব থানা এলাকা থেকে অনেক পেছনে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলখানা, জেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো এ থানা এলাকায় রয়েছে। তবুও উন্নয়নে পিছিয়ে ফতুল্লা। যোগাযোগ থেকে শুরু করে শিক্ষার ক্ষেত্রে কোন অবদান রাখেনি আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপি। তবে কিছু রাস্তা করলেও তা অপরিকল্পিত। রাস্তার পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা রাখেনি। ফরে সামান্য বৃষ্টিতে সড়কগুলো তলিয়ে ভোগান্তির সৃষ্টি করে। বছরের পর বছর ধরে শিল্পকারখানার শ্রমিকরা নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। যাতায়াতের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জীবনমানে পিছিয়ে রয়েছে শ্রমিকরা।
এদিকে ফতুল্লার উন্নয়নের দায়িত্ব শামীম ওসমান তার নিজের হাতে রাখলেও তিনি আসলে জানতেন না ফতুল্লার কোথায় কি সমস্যা রয়েছে। বর্ষায় ফতুল্লাবাসী সীমাহীন যন্ত্রনার মধ্য পার করছে। ফতুল্লার লালপুর এলাকায় এখনো পানির নিচে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে এই এলাকায় কোমর,হাটু সমান পানি জমেছে। চলাচলের সড়ক দিয়ে রিকশার বদলে চলছে নৌকা,ভ্যান। ময়লা,র্দুগন্ধযুক্ত পানি রাস্তা ছাপিয়ে মানুষের বসবাড়ীতে প্রবেশ করেছে। চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন পার করছে এলাকাবাসী। শুধু ফতুল্লায় নয়, বৃষ্টির পানি তলিয়ে গেছে কুতুবপুরের অধিকাংশ এলাকা। পানির নিচে রয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জের নিন্মাঞ্চলও। এনায়েত নগর এবং কাশীপুরেরও বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। ফলে এসব এলাকায় বসবাসকারী সাধারন মানুষকে সীমাহীন দূর্ভোগের মাঝে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
ফতুল্লার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে দেখাগেছে, বেশীরভাগ এলকায় রাস্তা করা হয়েছে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ছাড়া। রাস্তার পাশে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক তলিয়ে যায়। পানি যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিা পানি সড়ক এবং দুইপাশের স্থাপনা খুব সহজেই প্রবেশ করে। এসব চিত্র দেখেই বুঝা যায় পুরো ফতুল্লা অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে বছরের পর বছর এ অঞ্চলের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ফতুল্লাকে একাধিকবার সিটি করপোরেশন ভূক্ত করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী। শামীম ওসমান তার কর্তৃত্ব ধরে রাখতে গিয়ে ফতুল্লাকে সিটি করপোরেশন ভূক্ত করতে দেয়নি। যার ফল ভোগ করতে ফতুল্লার প্রায় বিশ লাখ মানুষ। তবে আগামী দিনগুলোতে যে জনপ্রতিনিধি হবে, সে যেন ফতুল্লার উন্নয়নে অবদান রাখেন এমন প্রত্যাশা ফতুল্লাবাসীর।