আজ সোমবার, ২৬শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কবে পূর্ণাঙ্গ হবে জেলা আ.লীগ

স্টাফ রিপোর্টার :

নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হবে হচ্ছে করেও ঝুলে আছে। কবে নাগাদ ঘোষণা আসবে কিংবা কেমন হবে পূর্নাঙ্গ কমিটি; সেই আলোচনা ছিলো স্থানীয় নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। বিশেষ করে, সম্মেলনের পর সভাপতি-সেক্রেটারির দেয়া পৃথক দুই খসড়া কমিটি নিয়ে তোলপাড় বেধেছিলো দুই মেরুতেই। কমিটিতে নিজ নিজ বলয়ের আধিক্য বাড়াতে অনেকেই ছুটেছিলেন কেন্দ্রের দিকে।
এরই মাঝে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আবহ শুরু হলে সংগত কারণেই থমকে যায় কমিটি কেন্দ্রীক আলোচনা। এবার নির্বাচন শেষ হওয়ায় নেতাকর্মীদের মাঝে আবারও আলোচনায় এসেছে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটির বিষয়টি।
জানা গেছে, দীর্ঘ দুই যুগ পর ২০২২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে পূর্বের কমিটির সভাপতি আবদুল হাই এবং সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদলকে স্বপদে বহাল রেখে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন খসড়া কমিটি কেন্দ্রে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। যদিও মেরুগত টানাপোড়েনের ফলে কয়েক মাস পর পৃথক ভাবে কমিটির খসড়া তালিকা কেন্দ্রে জমা দেন সভাপতি এবং সেক্রেটারি।
এর মধ্যে গত বছরের ১৮ই মার্চ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই তার প্রস্তাবিত পূর্নাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করেন। এতে দেখা যায়, যুগ্ম সম্পাদক পদে তিনি জাহাঙ্গীর আলম, ইকবাল পারভেজ এবং অ্যাডভোকেট মফিজ উদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেছেন।
এর প্রায় দেড় মাস পর গত বছরের ৩০ এপ্রিল কেন্দ্রে পৃথক খসড়া কমিটি প্রেরণ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল। এতে দেখা যায়, তিনি যুগ্ম সম্পাদক পদে ডা. আবু জাফর চৌধুরী বীরু, নাজমুল আলম সজল এবং মীর সোহেলের নাম প্রস্তাব করেছেন।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, উভয়ের খসড়ায় যুগ্ম সম্পাদক পদ ছাড়ও সহ-সভাপতি, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সদস্য পদ সহ বেশ কিছু পদের নামের তালিকায় বেশ অমিল রয়েছে। দুই খসড়া তালিকাকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে বিদ্যমান দুটি মেরুতেই পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা-সমালোচনা শোনা গিয়েছিল।
যদিও অনুসন্ধানের পর উভয়ের প্রস্তাবিত খসড়ার সমন্বয়ে একটি শক্তিশালি পূর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিবেন প্রধানমন্ত্রী; এমনটা জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে নানা ব্যস্ততায় জেলা কমিটির অনুমোদন আসেনি। এরই মাঝে নির্বাচনের সময় চলে আসায় কমিটির বিষয়টি আড়ালে চলে যায়। তবে, নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটির বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘আমরা বহু আগেই কেন্দ্রে খসড়া কমিটির তালিকা পাঠিয়েছি। তবে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় পূর্নাঙ্গ কমিটির অনুমোদন আসেনি। এখন যেহেতু নির্বাচন শেষ হয়েছে, সরকারও গঠন হয়েছে, সেহেতু কিছুদিন পর আমরা জেলা কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রে আলোচনা করবো। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই একটি শক্তিশালী পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।’
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যকার সম্পর্কের রঙ বদলেছে বারংবার। নানা বিষয়ে তারা যেমন দ্বিমত পোষন করেছিলেন, তেমনই ক্ষেত্র বিশেষে একে অপরের পাশেও ছিলেন। সবশেষ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পরপরই দুই নেতার মাঝে দূরত্ব প্রকাশ পায় মোটা দাগে। তারা সমন্বয় ছাড়াই পৃথক ভাবে খসড়া তালিকা দেন কেন্দ্রে। এক্ষেত্রে কার প্রস্তাবিত কমিটির অনুমোদন মিলবে তা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।
এই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘শুধু নারায়ণগঞ্জেই নয়, অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রেও সভাপতি-সেক্রেটারি পৃথক ভাবে কমিটি জমা দিয়েছিল। নেত্রীর নির্দেশনা ছিলো যে, যেই জেলা থেকে একক কমিটি এসেছে, সেগুলোর অনুমোদন দিতে এবং যেসকল জেলা থেকে পৃথক ভাবে খসড়া কমিটি এসেছে সেগুলো সমন্বয় করে দেয়ার জন্য। এক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জ থেকে যেই দুই খসড়া কমিটি দেয়া হয়েছে, তা সমন্বয় করেই পূর্নাঙ্গ কমিটির ঘোষণা আসবে বলে আমি মনে করি। আর পৃথক কমিটি দেয়া হলেও এর মধ্যে ১৮টি পদে কমন প্রার্থী ছিলো। এই ১৮টি বাদ দিয়ে বাকিগুলোতে সমন্বয় হবে। যেহেতু নির্বাচন শেষ হয়েছে, সেহেতু আশা করছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঠিক সময়ের মধ্যেই একটি শক্তিশালী ও সময় উপযোগি পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন।’
এই বিষয়ে জানতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।