সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
পরন্ত বিকেলে পশ্চিম আকাশে যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে ঠিক তখন হরিধ্বন্নি দিয়ে কিশোর ধ্রুব চন্দ্র দাসের (১৫) মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শ্বশানে। এটিই তার শেষ যাত্রা। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে যেতে দেখে, কান্নায় ভেঙ্গে পরে তার মা শুভ্রা দাস। ‘আমার সোনা, আমার সোনারে কই নিয়া যায়। কে আমারে মা কইয়া ডাক দিব, আমার কাছে ২০০ টাকা চাইবো। আমার সোনা।’ বলতে বলতেই অজ্ঞান হয়ে পরেন অভাগী এই মা। তার এ মাতম যেন শেষ হবার নয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের কারণে অল্প বয়সেই প্রথম সন্তানকে হারাতে হল শুভ্রা দাসকে। মঙ্গলবার রাতে শহরের ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে সহপাঠীদের ছুড়িকাঘাতে মৃত্যু হয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ধ্রুব চন্দ্র দাসের। বুধবার বিকেল ৫টায় মাসদাইর কেন্দ্রীয় শ্বশানে ধ্রুবোর শেষ সৎকার অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘটনায় নিহতের চার সহপাঠীকে আটক করেছে পুলিশ।
আহাজারি করতে করতে শুভ্রা দাস বলেন, ‘ওরা দুপুরে ডাক দিসে, আমার পুতে যায় নাই। বিকালে ডাক দিসে যায় নাই, রাইতে ডাক দিয়া নিয়া আমার পুতেরে মাইরালাইসে। আমি কেমনে এই যন্ত্রণা সহ্য করমু। আমি মইরাগেলে আমার যন্ত্রণা কমবো। আমার সন্তান নাই, আমার কিছু নাই। ওরা ডাক দিয়া আমার সোনারে মাইরালাইসে। ওদের কি কিছু করতনা ভগবান। আমার সোনারে কেরে নিল, আমি কি পাপ করসি! ভগবান, আমি কেমনে থাকমু। আমি কারে ধ্রুব কইয়া ডাকমু! ওরে ধ্রুবরে।’
বাবা মাধব চন্দ্র বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমার পোলার টেস্ট পরীক্ষা, কয়দিন পর এসএসসি দিব। ওরে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন আসিল। আমি এর বিচার চাই। আমার পোলারে যারা মারসে, ওদের বিচার করেন। ভগবান, ওগো বিচার করো ভগবান।’ এই বলতে বলতে চোখের পানি মুছেন অসহায় এই বাবা।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানান যায়, নিহত ধ্রুব ও গ্রেফতারকৃত ৪ কিশোর ইয়াসিন, পিয়াস, রিপন ও অন্তর ইসদাইর রাবেয়া হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। ছুটির পর প্রায় সময়ই তারা স্কুলের সামনের চায়ের দোকানে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিত। ঘটনার রাতে ধ্রুবে তার সহপাঠীরা ডেকে নিয়া যায় এবং স্কুলের কাছে একটি অন্ধকার স্থানে নিয়ে গিয়ে ছুড়িকাঘাত করে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মৃত্যু হয়।