সৈয়দ মোহাম্মদ রিফাত ও নিরাক হাসান:
রাকিব। মাত্র ৮ বছর বয়স শিশুটির। স্বাভাবিকভাবেই তার এখন স্কুলে পড়াশুনা আর মাঠে খেলাধুলার করার কথা। কিন্তু না। রাস্তায় হেঁটে হেঁটে প্রত্যেকদিন বাদাম বিক্রি করে ছেলেটি! এতটুকু বয়সে এত কষ্ট করতে দেখে মায়াভরা এ মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে সবাই। কেউ মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে আবার কেউ ১০ টাকার বাদাম কিনে ১৫ টাকা দেয়।
গতকাল চাষাঢ়াস্থ নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাকিবকে দেখে দীর্ঘক্ষন পিছু নিয়ে পরে কথা হয় দৈনিক সংবাদচর্চা’র এ প্রতিবেদকের সাথে। শুরুতে কথা বলতে অস্বস্তিবোধ করলেও পরে আগ্রহ প্রকাশ করে সে।
জানা যায়, বাবা-মা আর ভাই বোন নিয়ে নগরীর জিমখানা এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে রাকিব। বাবা চাকরী করে আর মা থাকেন বাসায়। ভাই বোনদের মধ্যে সে সবার বড়।
এতো অল্প বয়সে বাদাম বিক্রির কথা জানতে চাইলে রাকিব বলেন, আমি অনেক দিন ধইরাই বাদাম বেচি। আর এগুলা করতে আমার ভাল লাগে। এতো ওজনের একটি থালা মাথায় নিয়ে রাখতে কষ্ট হয় কিনা জানতে চাইলে সে বলে, কোন কষ্ট হয় না। আমার অভ্যস হইয়া গেছে।
পড়াশোনা না করে কেনো বাদাম বিক্রি করছো? এমন প্রশ্নের জবাবে রাকিব বলেন, আমি ছোট কালে পড়াশুনা করছিলাম, এখন করি না। বাদাম বেইচা বাসায় টাকা দেই। বাদাম বিক্রি করতে বাসা থেকে কোন চাপ দেয়া হয় না জানিয়ে সে আরও বলে, আমার বাবা-মা অনেক ভালো। তারা আমায় এগুলো করতে বলে না। আমি নিজেই করি।
আরও অনেক কিছু জানতে চাইলেও তার কোন জবাব দেয় নি রাকিব বরং এই ‘বাদাম বাদাম’ বলতে বলতে সামনের দিকে হাঁটা দেয় ৮ বছরের এই শিশুটি।
প্রত্যেক্ষদর্শী বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, প্রায় সময় শিশুটিকে শহীদ মিনারসহ চাষাঢ়ার আশপাশে বাদাম বিক্রি করতে দেখা যায়। বাদাম বিক্রির কথা জিজ্ঞেস করলে সে মৃদু হেসে বলে ‘আমি ইচ্ছে করেই করি’। আমরা অপ্রয়োজনেও অনেক সময় ওর কাছ থেকে বাদাম ক্রয় করি। আবার মাঝে মধ্যে বেশি টাকা দেই। আড্ডারত অবস্থায় হুট করেই মাথায় একটি বড় থালা নিয়ে এসে বলে আফা-ভাইয়া বাদাম দেই। তখন আর না নিয়ে থাকা যায় না। খেতে ইচ্ছে না করলেও ওর কাছ থেকে আমরা বাদাম কিনে নেই।