আজ শনিবার, ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ঐক্য নাকি ফাটল

স্টাফ রিপোর্টার :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। নির্বাচনী এই আলোচনায় উঠে আসছে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন প্রসঙ্গ। গত রমজানে এই আসন নিয়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদপূর্ন বক্তব্য রেখেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা। মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলে ২০টি গ্রুপ তৈরী হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা। পাশাপাশি তিনি দলে ঐক্যের আহবানও করেছিলেন। তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে বেশ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছিল। প্রায় দুই যুগ ধরে দলীয় এমপির দেখা না পাওয়া গুরুত্বপূর্ন ওই আসনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতারা কী ঐক্যবদ্ধ হবেন? নাকি খোকন সাহার সুরে সুর মিলিয়ে দলের ফাটল আরো প্রকোট হবে- সেই প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলে।

জানা গেছে, গত রমজানের আগে থেকেই মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপুর কর্মী সমর্থকরা তাদের নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে প্রচারনা চালিয়েছেন। এতেই চটেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা।

গত ৮ এপ্রিল বিএনপি-জামায়াত ও শিবির ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত শান্তি সমাবেশে খোকন সাহা আনোয়ার হোসেনকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘অনেকে মাঠে নেমেছেন শহরে পোস্টার লাগাচ্ছেন। এমপি নমিনেশন পাওয়ার জন্য দলটাকে টুকরো টুকরো করে ফেলছেন। আমি বলতে চাই আপনি তো অনেক পেয়েছেন। অন্যদেরকে পাওয়ার সুযোগ করে দেন। অন্যরাও কিছু পাওয়ার দাবি রাখে। সেটা না করে দলকে আপনারা বিভক্ত করছেন। এখনতো দুইজন প্রার্থী দেখা যাচ্ছে। ঈদের পরে অন্তত ২০ জন নৌকা নমিনেশন চাইবে আর ২০টা গ্রুপে বিভক্ত করে ফেলার চেষ্টা করা হবে। দলাদলি বাদ দিয়ে আসুন না একজন নৌকার নমিনেশন চাই। সবাই মিলে একজনের জন্য নৌকার জন্য ফাইট করি। নেত্রী যাকে নমিনেশন দেবে আমরা তার পক্ষে কাজ করব। নেত্রী যদি জোটের পক্ষে ন্যাপের এবি সিদ্দিককে নৌকা প্রতীক দেন, আমরা এবি সিদ্দিকের পক্ষেই কাজ করব।’

তথ্য বলছে, নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ধারায় বিভক্ত। একদিকে ওসমান পরিবার, অন্যদিকে চুনকা পরিবার। যা কিনা উত্তর ও দক্ষিন মেরু নামেও পরিচিত। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং আওয়ামী লীগ নেতা আনিসুর রহমান দিপুকে বর্তমানে দক্ষিন মেরু তথা মেয়র আইভীর পাশে দেখা যায়। আর সাধারন সম্পাদক খোকন সাহা উত্তর মেরু তথা এমপি শামীম ওসমানের অনুসারী।

আইভী বলয় থেকে আনোয়ার হোসেন এবং এ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় আছেন। তবে, শামীম ওসমানের বলয় থেকে কোন আওয়ামী লীগ নেতা সেই প্রত্যাশার কথা সরাসরি জানান দিতে পারছেন না। কারণ, এই আসনে বর্তমান জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমান এমপি শামীম ওসমানের বড় ভাই!

বিশ্লেষকরা বলছেন, মেরুগত টানাপোড়েন চললেও দলীয় এমপির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ সোচ্চার হলেও অপর একটি পক্ষ সহজে মুখ খোলেন না। অথচ, আসনটিতে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন এমপির দেখা নেই। ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। সেইবার নৌকা প্রতীকে জয়লাভ করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এসএম আকরাম। আসনটিতে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সংসদ সদস্য হিসেবে এখনো তার নামই রয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য দেখা যায়নি। এবার কী সেই ২২ বছরের অপেক্ষা ঘুচবে?