আজ শুক্রবার, ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

উল্টে গিয়ে পাল্টে গেলেন

স্টাফ রিপোর্টার :
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পারদ তুঙ্গে উঠেছে। উপজেলা নির্বাচন হলেও এতে নিয়মিত আলোচনার খোরাকে পরিণত হয়েছেন স্থানীয় এমপি কায়সার হাসনাত। এই নির্বাচনে যেন ভানুমতির খেল দেখাচ্ছেন এই সংসদ সদস্য। একেক সময় একেক প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে ভোটের মাঠে যেন প্রকাশ্যেই ডিগবাজী দিচ্ছেন তিনি। নিষেধাজ্ঞা ভেঙে নির্বাচনে এমপির হস্তক্ষেপ এবং দ্বিমুখি পদক্ষেপে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ ভোটারদের মাঝে চলছে সমালোচনাও।
জানা গেছে, আগামী ২১ মে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন চারজন প্রার্থী। যারা প্রত্যেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে রয়েছেন। এর মধ্যে ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করা মাহফুজুর রহমান কালাম সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান কমিটির অন্যতম কার্যকরি সদস্য পদে আছেন। মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী রফিকুল ইসলাম নান্নু আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক পদে, একই পদে থাকা আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হায়দার নির্বাচনে লড়ছেন দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে। আর আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল ওমর বাবু আছেন বর্তমান কমিটির সদস্য পদে।
এমপি এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় কমিটির সভায় পরিস্কার ভাবে ঘোষণা দিলেও বন্দরের মত সোনারগাঁয়েও সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রার্থীদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগ নেতা হলেও সোনারগাঁয়ের এমপি কায়সার হাসনাত একেক সময় একেক জনকে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছেন। এতে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অন্যান্য প্রার্থী এবং সচেতন ভোটাররা। বিব্রত হচ্ছেন সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরাও।
জানা গেছে, শুরুতে রফিকুল ইসলাম নান্নুকে নিয়ে মোগরাপাড়ায় নিজ বাসভবনে রুদ্ধদার বৈঠক করে তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন এমপি কায়সার হাসনাত। সেখানে পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুম সহ বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান ও কায়সার বলয়ের আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের পর নান্নু তার নির্বাচনি মিছিল এবং গণসংযোগে এমপি কায়সার হাসনাতের নাম করে নিজের প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন। এছাড়াও মোগরাপাড়ায় অবস্থিত সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়টি নান্নু তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কার্যালয় থেকে মাইক দিয়ে তার প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। নান্নুকে কায়সার হাসনাত সমর্থন জানিয়েছেন- তা পরিস্কার হলে চারিদিকে যখন আলোচনা-সমালোচনা চলছিলো- তখন এই সমালোচনার পালে যেন নতুন করে হাওয়া লেগেছে।
জানা গেছে, নান্নুকে ছেড়ে এমপি কায়সার হাসনাত এখন হাত রেখেছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী বাবুল ওমর বাবুর মাথায়। সম্প্রতি কায়সার অনুসারী স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেতাদের দেখা গেছে বাবুল ওমর বাবুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিতে।
এরই মাঝে বাবুর প্রতি এমপি কায়সার হাসনাতের সমর্থন নিয়ে তার অনুসারীরা বক্তব্য রাখতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে বারদী ইউনিয়ন পরিষদের বিতর্কিত চেয়ারম্যান লায়ন বাবুল বলেছেন, ‘এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার যাকে সমর্থন করছে, আমরা মনে কইরা নিমু প্রধানমন্ত্রী তাকে সমর্থন দিছে। আমার ইউনিয়ন পরিষদের সকল মেম্বার এবং আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা যদি আমাদের এমপি কায়সার হাসনাতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য মাঠে কাজ করি, তাহলে এমপি আনারস মার্কায় যাকে সাপোর্ট করেছে (বাবুল ওমর বাবু), তাকে নিয়ে বারদী থেকে আমরা কামিয়াব হইতে পারমু।’
এদিকে, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সাগর একটি অডিও ক্লিপের মাধ্যমে কায়সার হাসনাতের নতুন সমর্থিত প্রার্থী বাবুল ওমরের পক্ষে সবাইকে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। তার ওই অডিও ক্লিপটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এতে সাগরকে বলতে শোনা যায়, ‘সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীদের জানানো যাচ্ছে যে, আসন্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে সোনারগাঁয়ের ছাত্রলীগের অভিভাবক এবং আমাদের এমপি জনাব আব্দুল্লাহ আল কায়সারের নির্দেশে সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগ আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনাব বাবুল ওমর বাবু ভাইয়ের পক্ষে আনারস মার্কায় নির্বাচনের প্রচারনা করবে এবং সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে গত জাতীয় নির্বাচনের মত আমরা এমপি সাহেবের সম্মান এবং ছাত্রলীগের সম্মান বজায় রাখার জন্য আনারস মার্কায় নির্বাচন করে ঘরে ফিরবো ইনশাআল্লাহ।’
স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে নান্নুকে সমর্থন জানানো হলেও বাবুল ওমর বাবু ভোটের মাঠে দুহাতে টাকা উড়িয়ে যাচ্ছেন বিধায় এমপির সমর্থনেও ইউটার্ন ঘটেছে! বর্তমানে তিনি বাবুকে সমর্থন করায় কায়সারের নির্দেশনায় তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম, সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান জিন্নাহ, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিতর্কিত লায়ন বাবুল, সোনারগাঁ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাসেল, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সাগরসহ কায়সার হাসনাতের অনুসারীরা বাবুল ওমর বাবুর পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন।
এদিকে, এমপি কায়সার হাসনাত হস্তক্ষেপ করায় নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করছেন অন্যান্য প্রার্থীরা। একই সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও উপেক্ষা করা হচ্ছে বলেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন কেউ কেউ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহফুজুর রহমান কালাম দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘গত ৩ মে আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় কমিটির সভায় স্পষ্ট করে নির্দেশনা দিয়েছেন যে, উপজেলা নির্বাচনে যেন কোনো এমপি-মন্ত্রী হস্তক্ষেপ না করে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্যরা যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সোনারগাঁয়ের এমপি কায়সার হাসনাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছেন। তিনি একেক সময় একের প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন। বর্তমানে তার অনুসারীরা এমপির নাম করে বলছেন যে, বাবুল ওমর বাবুকে তিনি নতুন করে সমর্থন জানিয়েছেন! তার অনুসারী কয়েকজন আমার প্রতিন্দ্বন্দ্বী প্রার্থী বাবুর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনা এবং সভা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বক্তব্য রেখে ভোটের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশ বিনষ্ট করে যাচ্ছেন। এতে করে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেই নির্দেশনা ছিলো- সোনারগাঁয়ে তা ভঙ্গ করা হচ্ছে।’
জানতে চাইলে দোয়াত কলম প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আলী হায়দার দৈনিক সংবাদচর্চাকে বলেন, ‘ভোটে স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীদের হস্তক্ষেপ না করতে আমাদের নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন ভোটের মাঠ সকল প্রার্থীর জন্য সমান থাকে। নির্বাচন যেন প্রভাবিত না হয়। নেত্রীর এই নির্দেশনাকে আমরা সকলেই গ্রহণ করেছি। দায়িত্বশীলদেরও উচিত নেত্রীর নির্দেশনাকে মেনে চলা। তাই একজন প্রার্থী হিসেবে একটি প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা করছি।’