আজ সোমবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রূপগঞ্জে ইভটিজিং বৃদ্ধি পাওয়ায় বাল্য বিবাহের প্রকোপ বাড়ছে!

ইভটিজিং

রূপগঞ্জে ইভটিজিং বৃদ্ধি পাওয়ায় বাল্য বিবাহের প্রকোপ বাড়ছে!ইভটিজিংসংবাদচর্চা ডেস্ক:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে অস্বাভাবিক হারে অপরিণত বয়সে বাল্য বিবাহের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় বেশি পরিমাণ শর্করা খাদ্য আহার করায় ছেলে মেয়েরা অল্প বয়সে পরিপ্ক হয়ে যায় ফলে দেখা দেয় নানা সমস্যা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের পথে বখাটে ও ইভটিজারের যৌন হয়রানীর ঘটনা থেকে বাঁচতে এ বাল্য বিবাহের দিকে ঝুঁকছেন বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। আবার সামাজিকভাবে লজ্জা পাবার আশংকায় যৌন হয়রানীর শিকার হলেও অধিকাংশ ঘটনাই প্রকাশ করছেন না তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পিতলগঞ্জ এলাকায় পিতলগঞ্জ দাখিল মাদরাসা ও আব্দুল হক্ব ভুইয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অপরিণত বয়সের  শিক্ষার্থীদের মাঝে বাল্যবিবাহের ঘটনা গত ৩ মাসে ৮টি ঘটেছে। এদের মধ্যে  উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ২ টি বাল্য  বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে তবে জামে মসজিদের ইমামের মাধ্যমে তাদের সামাজিক বিবাহ বন্ধন অব্যাহত রয়েছে। একই ইউনিয়নের  জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের একই সময়ে ২টি বেলদী ও কাজির বাগ মাদ্রাসায় ৪টি, ইউসুফ গঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪টি, বাগবের কর্ডোভার শিক্ষার্থী ২টি, মুশুরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১টি, মত্তুর্জাবাদ ফাজিল মাদরাসার ২টি, কালাদী মাদরাসার শিক্ষার্থী ২টি, হাজী রফিজদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ের ৩টি, ভোলাব ইউনিয়নে ৫টিসহ অর্ধশতাধিত বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। সূত্র জানায় এসব বাল্য বিবাহের ঘটনা শতকরা ৩০ভাগ উভয় পরিবারের পরিবারের ইচ্ছায় ঘটে।

অন্যদিকে অপরিণত বয়সে প্রেমের ঘটনায় জড়িয়ে পরিবারের অমতে ভুয়া জন্ম সনদ ব্যবহার করে কোর্ট ম্যারেজ নামে আরো ৩০ভাগ জড়িয়ে যায় এ ধরণের ঘটনায়। অপর ৪০ভাগই পরিবারের নানা অসঙ্গতি ও বিদ্যালয়ের যাতায়াতের সময় ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ার ভয়ে ভাল সম্বন্ধ অযুহাতে পারিবারিকভাবে বিয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। এসব ঘটনায় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করলে কাজীকে রেজিস্ট্রি কর্ম থেকে আটকানো গেলেও পুরোহিত ও মোল্লাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না এ বাল্য বিবাহের ঘটনা। ফলে অনেকটা অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে এ ঝুঁকিপূর্ন পারিবারিক বন্ধন।

সূত্র আরো জানায়, গত ২ বছর পূর্বে মধূখালী এলাকার ৭ম শ্রেণির ছাত্রী ফাতেমা আক্তার(১৪) এর সঙ্গে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় বিরাব এলাকার চাল বিক্রেতা ইকবাল (২৯) মিয়ার। বিবাহের পর থেকেই পারিবারিকভাবে খাঁপ খাইয়ে নিতে না পারায় সংসার ছেড়ে বাপের বাড়ি পালিয়ে আসে ফাতেমা। পরে ডিভোর্সের মাধ্যমে  সংসারের ইতি টানতে হয় ফাতেমাকে। একইভাবে একই গ্রামের মনিরা (১৩) ও জনি(১৫)র অষ্টম শ্রেণি ও ৭ম শ্রেণিতে পড়ার সময় একাধিকবার স্থানীয় বখাটের মাধ্যমে হয়রানীর শিকার হলে পরিবার তাদের বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। পরে বিয়ের পিরিতে বসলেও নানা অসঙ্গতিতে এখন তারা বাপের বাড়িতে ডিভোর্স ঘটিয়ে বসে আছে।

এছাড়া স্থানীয়রা উপজেলা প্রশাসনকে জানালে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলেও হয়রানীর ভয়ে এসব সংবাদ চেপে যান সাধারন লোকজন। আর তাতে আনায়াসেই ঘটিয়ে ফেলা হয় বাল্য বিবাহ নামক মরণ ব্যাধির। তাছাড়া আইনিভাবে বাঁধা দিলেও স্থানীয় মসজিদের ইমামকে ডেকে মুসলিম সমাজের লোকজন  কিংবা সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মন্দিরের পুরোহিতকে ডেকে বিয়ে পড়িয়ে থাকেন। এতে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়া।

এ বিষয়ে আব্দুল হক্ব ভুঁইয়া স্কুলের শিক্ষক মনিরুল হক্ব  ভুঁইয়া বলেন, বিদ্যালয় চলাকালীন বখাটে প্রতিরোধ কমিটি করেও সুরাহা পাওয়া যাচ্ছে না। মাদকসেবী ও বখাটে বেড়ে যাওয়াতে  ছাত্রীরা পথে ঘাটে হয়রানীর শিকার হয়ে থাকে। এতে আমরা সঙ্কিত।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, কোন শিক্ষার্থী পথে ঘাটে হয়রানীর শিকার হলে নির্ভয়ে অভিযোগ করলে থানায় আসুক বা ফোনে জানালে আমরা আইনি সহায়তা দেব এবং দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে  রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য  ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার জাইদুল ইসলাম বলেন,অপরিপক্ক ফল যেমন সুস্বাদু হয় না তেমনি অপরিণত বয়সে বিয়ে দিলে সংসারে সুখ হয় না। সন্তানরা সারা জীবন নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এর ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করে পরিবার।ফলে পরিবার ও  সমাজের এ বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা অতীব জরুরি বলে মনে করেন তিনি। ।

এসব বিষয়ে  রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল ফাতেহ মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বাল্য বিবাহের তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক তা বন্ধ করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি পিতলগঞ্জ এলাকার রাজিয়া নামক ৬ষ্ট শ্রেণির শিক্ষার্থীর বিয়ের আয়োজন চলছিল বলে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তা আটকানো হয়।  বাল্য বিবাহের ব্যাপারে  প্রতিরোধ কমিটি ও উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে।