আজ বৃহস্পতিবার, ১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আইভীর অপসারণ নিয়ে না.গঞ্জবাসীর দ্বিমত

স্টাফ রিপোর্টার:

নারায়ণগঞ্জসহ সারাদেশের ১২সিটি করপোরেশন মেয়রকে অপসারণ করেছে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার। বর্তমান সরকারের সিদ্ধিন্তে অপসারিত ১১ সিটি করপোরেশন মেয়রের বিষয়ে কোনো দ্বিমত না থাকলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে অপসারণ নিয়ে নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে দ্বিমত সৃষ্টি হয়েছে।
নগরবাসীর মতে, আওয়ামী লীগ দলীয় রাজনীতিবিদ হলেও দলটির অন্যান্য জনপ্রতিনিধি থেকে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ব্যতিক্রম। তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তিনি দল, মত নির্বিশেষে নারায়ণগঞ্জবাসীদের জন্য কাজ করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যখন অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব ছেড়ে পালিয়ে গেছেন ওই সময় মেয়র আইভী প্রতিদিন নগর ভবনে গিয়েছেন এবং যথাযথভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মেয়র আইভীকে অপসারণের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবেচনা করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন অনেকে। তারা বলেন, সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে বিগত ২১ বছরে মেয়র আইভীর কাজ, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, ও জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা দারকার ছিল। এসব বিষয় বিবেচনা করে, অন্তত জনগণের ভোটের মূল্যায়ন করে মেয়র আইভীকে তার পদে বহাল রাখলে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হতো বলে মন্তব্য করেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী সংকর রায় বলেন, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী যে কয়টি নির্বাচন করেছেন এর প্রত্যেকটি নির্বাচন ছিল প্রতিদ্বন্দ্বীতা মূলক এবং সুষ্ঠু। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। এই পরিস্তিতিতে জনগণের ভোটাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অন্তর্বতীকালিন সরকার মেয়র আইভীকে তার পদে বহাল রাখা পারতো। ‘নারায়ণগঞ্জবাসী কখনো মেয়র আইভীর পদত্যাগ বা অপসারণ চায়নি’ বলে মন্তব্য তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর নানা প্রতিকূলতার মধ্যে উনি নারায়ণগঞ্জের জন্য কাজ করেগেছেন। যে সময় সবাই পলাতক সে সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা সত্যেও মেয়র আইভী শহরে ছিলেন এবং প্রতিদিন নগর ভবনে এসে তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। উনি সৎ এবং জনগণের প্রতিনিধি বলেই এমনটা পেরেছেন। আমি মনে করি, জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এবং তার কাজ, ব্যক্তিত্ব বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত না নিলে ভালো হতো। পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে মেয়র আইভীকে বহাল রাখা হলে নগরবাসী সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘সামগ্রীকভাবে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড. সেলিনা হায়াৎ আইভী সে সিদ্ধান্তের বলি’ বলে মন্তব্য করেন নাগরিক কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিরুল ইসলাম বলেন, দেশের অন্যান্য সিটি, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ও সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মিলানোটা ভুল হয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সেলিনা হায়াৎ আইভী সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন মানুষ। উনি নিজের দলের লোক, ওসমান পরিবার দ্বারা নির্যাতিত ও নানা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। প্রতিমুহুর্তে শুনতে হয়েছে বিএনপি, বাম, এর-হের দালাল। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনে, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত একজন মেয়রকে অন্য মেয়রদের সাথে একই পাল্লায় ফেলা ঠিক হয়নি। তাহলে ভালো মন্দের কোনো তফাত থাকলো না। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা সভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, যারা দলীয়ভাবে, বাণিজ্যিক নির্বাচন করে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন তাদের বিষয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই। তবে মেয়র আইভী সত্যিকার অর্থেই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। আমি মনে করি, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়র আইভীর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দ্বিতীয়বার ভাবার প্রয়োজন আছে। মেয়র তার নৈতিকতা, যোগ্যতা, দক্ষতা, একনিষ্ঠতা দিয়ে জনগণের, গণমানুষের জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। তিনি দলীয় কোনো সুযোগ সুবিধা নেননি।
‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নিয়ে অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের দ্বিতীয়বার ভাবার প্রয়োজন আছে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, জাতীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১২জন মেয়রকে অপসারণ করেছেন। তাদের স্পিরিট’কে আমরা সম্মান করি। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন মেয়রকে অন্যান্যদের সাথে গড়ে হিসেবে দেখা হলে প্রশ্ন আছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২২সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচন দেশী-বিদেশী মানদন্ডে এটা উল্লেখযোগ্য এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যে নির্বাচনে ৬৮ শতাংশ ভোট পরেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত সাহেব নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জ এসেছিলেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন অন্তত্য স্বচ্ছ এবং সঠিক হয়েছে। যারা প্রতিদ্বিন্দ্বিতা করেছে তারাও একই কথা বলেছে। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। গত ২১ বছর আইভী পৌরসভা চেয়ারম্যান ও সিটি মেয়র রইলেন এর মধ্যে কতগুলো ঘটনা রয়েছে। ব্রাক থেকে একটি বই বের করেছে, সেখানে তারা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক কয়েকটা সংস্থা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রশংসা করেছে। জাইকা, ওয়ার্ড ব্যাংক, এডিপি দেশের বাকি সিটি করপোরেশনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ করেছে। এসব বিনিয়োগ ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণে করেছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, আইভী যতদিন ক্ষমতায় ছিল, কেউ পারনি আইভী আওয়ামী লীগের মেয়র ছিল। সে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সকল দল নির্বিশেষে সে তার ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন চেয়ারম্যান, মেয়রদের কার্যালয় দলীয় কার্যালয়ে রূপান্তিরিত হলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে তা হয়নি। এ সমস্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় সিদ্ধান্তগুলো আমরা সম্মান করি। কিন্তু পাশাপাশি এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। সবকিছুকে এক সাথে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।
আমরা দেখেছি, ১২টির মধ্যে ৯টি সিটি করপোরেশন অফিসে যাচ্ছিলেন না মেয়রা। ব্যাতিক্রম নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও রংপুর সিটি করপোরেশন, এই তিনটির বিবেচনা হচ্ছে ভিন্ন। সবকিছু একসাথে না মিলিয়ে এটা ভিন্নভাবে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।