স্টাফ রিপোর্টার :
বিগত ১৬ বছরে নারায়ণগঞ্জ সদর-বন্দরে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ডে অনেকেই নিজেদের ভাগ্য বদলেছেন, হয়ে উঠেছেন প্রভাবশালীও। তর্জন-গর্জনে নিজেদেরকে আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবেও জাহির করেছেন বারংবার। এই যেমন সদ্য সাবেক এমপি শামীম ওসমানও সভা-সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আবেগঘন ও স্মৃতিবিজরিত বক্তব্য দিয়ে উপস্থিত শ্রোতাদের অশ্রুসিক্তও করেছিলেন বারংবার। তবে দলের দুঃসময়ে সেই শামীম ওসমান এখন পিঠ বাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গতকাল ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯ তম শাহাদাত বার্ষিকী গেলেও এদিন শামীম ওসমান তো বটেই, তার একনিষ্ট কর্মীদের কেউ-ই নারায়ণগঞ্জে শোক দিবসের কোনো কর্মসূচিই পালন করেননি।
দলটির সাধারণ সমর্থকরা বলছেন, তারা এখন নিজেদের পিঠ বাঁচাতে গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে, এমন দুঃসময়েও নারায়ণগঞ্জে থেকে ১৫ আগস্টের শোক দিসব পালন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বলছেন, মেয়র আইভী দুঃসময়ে শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতা পালন তথা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে কিছুটা হলেও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের উজ্জত রক্ষা করেছেন।
এদিকে, ২০১১ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হওয়ার পর থেকেই আইভী বিরোধীতায় সরব থাকা শামীম ওসমান তাকে নানা ভাবে তিরস্কার করে গিয়েছিলেন। নিজেকে ত্যাগী ও দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে জাহির করার পাশাপাশি আইভীকে সুবিধাবাদী এবং সু-সময়ের কোকিল বলেও মন্তব্য করেছিলেন প্রায় সময়ই। মেরুগত বিভাজনে থাকা ওসমান বলয়ের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও আইভীকে সুবিধাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তবে দলের দুঃসময়ে সেই আইভীই গতকাল নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন। শামীম ওসমান কিংবা তার বলয়ের নেতারা ছিলেন লাপাত্তা।
প্রবীন রাজনীতিবীদরা বলছেন, দুঃসময় বা প্রতিকূলতার মাঝেও নিজেকে আড়াল করেননি আইভী। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলেও তিনি সাহসীকতার পরিচয় দিয়েছেন। স্বাক্ষর রেখেছেন দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে। তিনি গতকাল শোক দিবসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে তার কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা এবং শোক জ্ঞাপনের মধ্যদিয়ে মূলত নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের মান রেখেছেন। যেই আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে নিয়ে সমালোচনায় মুখর ছিলেন, তাদের কাউকেই ১৫ই আগস্টে নারায়ণগঞ্জে উঁকি দিতেও দেখা যায়নি।
জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঢাকার ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়িতে স্ব-পরিবারে নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান। সেই থেকেই এই দিনে শোক দিবস পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ। টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ১৫ আগস্টের শোক দিবসকে ঘিরে পাড়া-মহল্লায় দোয়া, কাঙ্গালী ভোজ, আলোচনা ও স্মরণসভা সহ নানা কর্মসূচিতে সরব থাকতেন। গত বছরও নারায়ণগঞ্জে বেশ ঘটা করে ১৫ আগস্টের কর্মসূচি পালিত হয়েছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পলায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দলটির নেতাকর্মীরাও গা ঢাকা দেয়। নানা ভাবে প্রভাব বিস্তার করা শামীম ওসমান এবং তার কর্মীরাও পলাতক রয়েছেন। শোক দিবস ঘিরে হাইকমান্ড থেকে কর্মসূচি দেয়া হলেও নারায়ণগঞ্জে ওই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের কাউকেই দেখা যায়নি। দলের এমন দূর্দিনে অবশ্য মেয়র আইভীই তার সমর্থকদের নিয়ে শহরের ২নং রেল-গেইট এলাকায় আওয়ামী লীগের অফিসে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।