স্টাফ রিপোর্টার :
অচিরেই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে যাচ্ছে। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফেরার পরই এই ঘোষণা আসতে পারে। একাধিক বিশ্বস্ত সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটিতে নিজেদের বলয় ভারী করতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে উত্তর ও দক্ষিন মেরু। ইতিমধ্যেই তারা কেন্দ্রে দৌড়ঝাপ শুরু করেছে। বিভিন্ন পদে দেনদরবারও চলছে। সূত্রগুলোর দাবি, পূর্নাঙ্গ কমিটিতে পাল্লা ভারী করতে দুই গ্রুপের অদৃশ্য লড়াই চলছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি উত্তর ও দক্ষিণ মেরু নামে দুই ভাগে বিভক্ত। ওসমান পরিবারকে কেন্দ্র করে উত্তর মেরু আর আলী আহমদ চুনকা তথা বর্তমান মেয়র আইভীকে কেন্দ্র করে দক্ষিন মেরুর রাজনীতির ধারা নারায়ণগঞ্জে প্রচলিত। নানা বিষয়েই এই দুই মেরুর প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। এবারের জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়েও সেই প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে।
রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলের মতে, দুটি বলয়ের মধ্যে দক্ষিন মেরু তথা মেয়র আইভীর পক্ষে সিনিয়র ও যোগ্যতা সম্পন্ন নেতার সংখ্যা বেশী। শামীম ওসমানের বলয়ে এমন হেভীওয়েট নেতার সংখ্যা বর্তমানে হাতে গোনা। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল রয়েছে শামীম ওসমানের অনুগত।
অন্যদিকে, মেয়র আইভীর সমর্থনে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের এমপি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক), জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির, আরজু রহমান ভূঁইয়া, আদিনাথ বশু, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমূখ। ইতিমধ্যেই তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেছেন। সবশেষ গত শনিবার মেয়র আইভীর নেতৃত্বে আনিসুর রহমান দিপু, আদিনাথ বশু ও জাহাঙ্গীর আলম এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। আসন্ন জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি সহ নানা বিষয়ে তারা কথা বলেছেন। অন্যদিকে, শামীম ওসমানের বলয় থেকে ভিপি বাদলও কেন্দ্রে যোগাযোগ করেছেন। এর মাধ্যমে পূর্নাঙ্গ কমিটিতে নিজ নিজ বলয়ের পাল্লা ভারী করতে চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক পদে পূর্বের নেতৃত্বই বহাল রেখেছে কেন্দ্র। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্নাঙ্গ কমিটির খসড়া করতে বলা হলেও দীর্ঘ ছয় মাসেও তা হয়ে উঠেনি।
রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মাঝে বিবাদ বেশ পুরনো। স্থানীয় যেকোন নির্বাচন কিংবা কমিটি গঠন; সর্বত্রই এই বিবাদ দৃশ্যমান হয়। যার প্রভাব ছড়িয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রেও। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে মেরুগত টানাপোড়েন চলছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদল পৃথক দুটি বলয়ে রয়েছেন। ফলে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মাঝে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতাকর্মী।
তবে, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেছেন, নবীন ও প্রবীনদের সমন্বয়ে একটি সময় উপযোগি পূর্নাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা তিনি কেন্দ্রে প্রেরণ করেছেন।