আজ রবিবার, ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয় পার্টির ‘যাত্রা’ পালা

স্টাফ রিপোর্টার

ক্ষমতা ছাড়ার পরও একটা সময়ে নারায়ণগঞ্জে শক্ত অবস্থান ছিলো জাতীয় পার্টির। টানা তিনবার তত্ববধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে জেলায় একটি আসন না পেলেও শহর-বন্দরে ভোট ব্যাংক ছিলো ঈর্ষণীয়। সাংগঠনিকভাবেও দলের নেতাকর্মীরা ছিলো চাঙ্গা। ওই সময়ে শক্তিশালী কমিটি থাকলেও এখন একই কমিটির একাধিক রূপ দেখে বিষ্মিত রাজনীতি সচেতন মহল।

তথ্য মতে, ‘৯০ এ এরশাদ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসন জাতীয় পাটির দখলেই ছিলো। সে সময়ে নারায়ণগঞ্জের ৫ টি আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন যথাক্রমে সুলতানউদ্দিন ভূইয়া, এম এ আউয়াল, আ ন ম বাহাউল হক, এমএ সাত্তার ও নাসিম ওসমান। এরমধ্যে বাহাউল হক নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর বিএনপি-আওয়ামীলীগ, বাম জোট সহ প্রায় সব রাজনৈতিকদলের তুমুল আন্দোলনে পতন হয় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সরকারের। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তিনটি তত্ববধায়ক সরকারের আমলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জে একটি আসনও পায়নি জাতীয় পার্টি। তবে সে সময়ে শহর-বন্দর নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে দলটির ভোট ব্যাংক ছিলো চোখে পড়ার মতো। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মতে, এর মূল কারিগর হলেন নাসিম ওসমান। যিনি শহর জাতীয় পার্টির সভাপতি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হয়েছিলেন আর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। ২০০৮ সালে ৯ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটে গুরুত্বপূর্ণ দল ছিলো জাতীয় পার্টি। ওই নির্বাচনে জেলার একটি আসন জাতীয় পার্টি পায়। শহর-বন্দরে নির্বাচিত হন নাসিম ওসমান। ১০ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। তখন জোট না করলে কৌশলগতভাবে জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেয় আওয়ামীলীগ। ওই নির্বাচনে জেলায় জাতীয় পার্টির নাসিম ওসমান ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে সংসদ সদস্য হন লিয়াকত হোসেন খোকা। একাদশেও নারায়ণগঞ্জে দুইটি আসন পায় জাতীয় পার্টি। তবে নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর ওই আসনে এমপি হন তার ছোট ভাই সেলিম ওসমান।

একটানা তিনবার এখানে দলটি সংসদীয় আসন পেলেও আগের মতো পার্টির শক্তিশালী অবস্থান নেই বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মী ও রাজনীতি সচেতন মহল। তাদের মতে, অনেক দিন ধরে শহরে পার্টির কোন অফিস নেই। জেলা ও মহানগর কমিটি চলছে আহ্বায়ক দিয়ে। ইতিমধ্যে জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবুল জাহের মারা গেছেন। তার মৃত্যুর পর কমিটি নিয়ে তৈরী হয়েছে ধুম্রজাল।
তথ্য মতে, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক যখন আবুল জাহের তখন সদস্য সচিব এডভোকেট আব্দুল মজিদ খোন্দকার। জাহের মারা যাওয়ার পর জেলা জাতীয় পার্টির নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়। ওই জেলা কমিটিতে বন্দর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ সানুকে আহ্বায়ক করা হয় আর মহানগরের আহ্বায়ক হন আকরাম আলী শাহীন। তবে এ কমিটি মানতে নারাজ আব্দুল মজিদ খোন্দকার। তার মতে, আবুল জাহেরর আহ্বায়ক কমিটিতে তিনি সদস্য সচিব ছিলেন এখনও আছেন। এ দুই কমিটির ফাঁকে সম্প্রতি জালিয়াতির মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া জনৈক ভেন্ডার গিয়াসউদ্দিনও নিজেকে মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক পরিচয় দিতেন। তবে জেলা কমিটির আহ্বায়ক সানাউল্লাহ সানু বলেছেন, গিয়াসউদ্দিন এ পদে ছিলেন না। তিনি তাকে প্রতারক বলেও অভিহিত করেছেন। যদিও গ্রেপ্তারের আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এ দুইজনকে একসঙ্গে দেখা যেতো। তখন গিয়াসউদ্দিনকে লিডার বলে সম্বোধন করতেন সানু। এরই মধ্যে আবার বিদিশা এরশাদ নারায়ণগঞ্জে এসে জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির দু’টি কমিটি ঘোষণা করেছেন। এ কমিটিতে যারা আছেন তারা কেউ পরিচিত মুখ নয়।

এদিকে নাসিম ওসমান পত্নি পারভীন ওসমান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন। তার নেতৃত্বে এ পার্টির একটি অংশ দলীয় কর্মকান্ডে যোগ দেয়। অপরদিকে ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন, ফতুল্লার সালাহউদ্দিন খোকা, কাজী দেলোয়ার হোসেন জাতীয় পার্টি করলেও স্থানীয় নেতৃত্বের সাথে তাদের খুব বণিবনা নেই।

জাতীয় পার্টির এ হাল দেখে অনেকেই হাস্যরস্যে নানা মন্তব্য করছেন। বিভিন্ন আড্ডায় জাতীয় পার্টির স্থানীয় কমিটির হাল দেখে যাত্রা পার্টি বলে টিপ্পনি কাটে। যাত্রায় যেমন নানা চরিত্র থাকে,তারা মঞ্চে একেক দিন একেকজন ভিন্ন ভিন্ন অভিনয় করেন তেমনি নারায়ণগঞ্জে এ পার্টির নানা রূপের কমিটি রয়েছে বলে মন্তব্য তাদের।