ডেস্ক রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বিরুদ্ধে স্থানীয় অনলাইন পত্রিকা প্রেস নারায়ণগঞ্জ এর এক সাংবাদিককে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক ঘন্টা ওই সাংবাদিককে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পেটানোর পর উপাধ্যক্ষের রুমে নিয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাকে সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে মানিব্যাগ ও মুঠোফোন ফেরত দেয়া হয়। সোমবার দুপুরে কলেজ প্রাঙ্গণে ছাত্র-ছাত্রী সংসদে এই ঘটনা ঘটে। আহত সাংবাদিক তোলারাম কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
এদিকে কলেজ ক্যাম্পাসে সাংবাদিককে মারধরের ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে চরম ক্ষোভ দেখা দেয় সাংবাদিক সমাজে। সাংবাদিকরা সুষ্ঠ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক সৌরভ হোসাইন জানান, তিনি নারায়ণগঞ্জ সরকারী তোলারাম কলেজের প্রার্ণী বিদ্যা বিষয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় অনলাইন পত্রিকা প্রেস নারায়ণগঞ্জ এর নিজস্ব প্রতিবেদক। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমার সহপাঠী অমিত হাসানকে দিয়ে মুঠোফোনে আমাকে কলেজে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমি সরকারী তোলারাম কলেজের কলা ভবনের সামনে পৌঁছাই। সেখানে ৫/৬ জন ছাত্রলীগের ক্যাডার আমাকে বলে তুই কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত, জামায়াত শিবিরের রাজনীতি, বাম রাজনীতি করিস, আমাদের বিরুদ্ধে নিউজ করিস এই বলে আমাকে মারতে মারতে ছাত্র-ছাত্রী সংসদে নিয়ে যায়। সেখানে মহানগর ছাত্রলীগের আহবায়ক ও সরকারী তোলারাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদের উপস্থিতিতে আমাকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে বেধড়ক পেটানো, লাথি, কিল ঘুষি মারা হয়। এভাবে তিন দফায় ঘণ্টাখানেক সেখানে আমাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের সময় আমি চিৎকার করতে চাইলে তারা আমার মুখ চেপে ধরে মারধর করে। আমার সঙ্গে থাকা ব্যাগ, মুঠোফোন ও মানিব্যাগ এবং সাংবাদিকতার আইডি কার্ড ছিনিয়ে নেয় তারা। পরবর্তীতে আমাকে ধরে উপাধ্যক্ষের রুমে নিয়ে যাওয়ার সময়ও মারতে থাকে। উপাধ্যক্ষের রুমে তারা আমার বিরুদ্ধে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে জড়িত থাকার কোন অভিযোগ তারা প্রমাণ করতে পারেনি। পরবর্তীতে আমাকে সাদা কাগজে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে আমার মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফেরত দেয়া হয়। তবে মুঠোফোনের এয়ারফোনটি তারা ফেরত দেয়নি। আহত সাংবাদিক সৌরভ হোসাইন প্রথম আলো বন্ধু সভার সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক।
অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সরকারী তোলারাম কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ বলেন, ওই ছেলেকে আমি চিনি না। তাকে মারধর করার প্রশ্নই ওঠে না।
এ ব্যাপারে সরকারী তোলারাম কলেজের উপাধ্যক্ষ আমিনুল ইসলাম জানান, ওই ছেলের ছাত্রলীগের ছেলে-পেলেদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি থেকে ওই ঘটনা ঘটেছে। ওই পোলাপানদের হাত থেকে ছেলেটাকে বাঁচিয়ে দিলাম। ওই ছেলে ছাত্র শিবির করে না। তাকে ওরা সামান্য মারধরের চেষ্টা করলে আমরা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছি। এই বয়সের ছেলে পেলের মাথা গরম থাকে। পরে আমি তাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছি। কলেজে সবাই সহ অবস্থান করবো-এটাই আমরা চাই। মুচলেকা নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের ছেলে পেলেরা মুচলেকা নেয়ার চেষ্টা করেছিল। পরে তাদের কাছ থেকে ওইটা ছিড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিউজ করার মত বিষয় নয় বলে তিনি জানান।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রিয়াদ নারায়ণগঞ্জের একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের নাম ভাঙ্গিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করেছে। এরআগেও তার দ্বারা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
সুত্র: প্রেসনারায়ণগঞ্জডটকম