আজ শুক্রবার, ১৫ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৮শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে অনিয়মের শেষ কোথায়

নিজস্ব প্রতিবেদক
মোঃ রফিক (ছদ্মনাম) ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিনের ন্যায় ব্রাশ করে মুখ ধুতে যায়। কুলি করার জন্য পানি মুখে নিলে রফিক লক্ষ করেন যে, মুখের পানি তাঁর নিয়ন্ত্রনে নেই। রফিকের মুখমন্ডলের ডান প্রান্ত দিয়ে কুলি করার পানি আপনা-আপনি পড়ে যাচ্ছে। রফিক মুখ ধুয়ে ঘরে প্রবেশ করে পানি পান করতে গেলে তিনি আবারও দেখতে পান তাঁর মুখমন্ডলের ডান প্রান্ত দিয়ে পানি আপনা-আপনি পড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ রফিক দেখতে পান স্বাভাবিকের তুলনায় তার মুখমন্ডলের ধরন অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। কোন উপায়অন্তর না পেয়ে রফিক স্থানীয় এক ফার্মেসীর ডাক্তারের পারামর্শ নিয়ে নাররায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চলে যায়। কর্তব্যরত ডাক্তার স্বাভাবিক নিয়মে কিছু প্রশ্ন করে প্রেসক্রিপশনে সিটি স্কেন, কয়েকটি রক্ত পরীক্ষা সহ আরো কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। এক পর্যায়ে কর্তব্যরত ডাক্তার উল্লেখিত পরীক্ষাগুলো নারায়ণগঞ্জের একটি ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের নাম উল্লেখ করে সেই স্থান থেকে পরীক্ষাগুলো করাতে বলেন।

ভুক্তভোগী রফিকের সাথে দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, আমার যে সমস্যার জন্য ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের ডাক্তার যে সকল পরীক্ষা করাতে বলেছেন সেই পরীক্ষার রিপোর্ট গুলো কোন কাজে আসেনি। নারায়ণগঞ্জের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে রিপোর্টগুলো উপস্থাপন করলে তিনি আমাকে জানান, এ সকল পরীক্ষার কোন প্রয়োজন ছিল না। আপনি কেন এ সকল পরীক্ষাগুলো করেছেন! ভিক্টোরিয়া হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে যে সকল পরীক্ষাগুলো করতে দিয়েছেন সেই পরীক্ষাগুলো করতে প্রায় দশ হাজার টাকার উর্ধ্বে খরচ করতে হয়েছে। অথচ একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলছেন এই পরীক্ষাগুলো করার প্রয়োজন ছিল না।

নারায়ণগঞ্জের সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিভিন্ন ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কতিপয় লোকের আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন প্রান্ত হতে আগত রোগীরা ডাক্তার দেখিয়ে বের হতে না হতেই অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিরা রোগীর হাতে থাকা প্রেসক্রিপশনটি কেড়ে নিচ্ছে। এভাবে চলছে নারায়ণগঞ্জের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডায়াগনিস্টিক সেন্টারের কতিপয় দালালদের দৌরাত্ম।

ভুক্তভোগী রোগী আরাফাত হোসেন জানায়, দালালরা সব সময় অপেক্ষা করে রোগীরা কখন ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হবে আর যখন রোগীরা বের হয় তখন একাধিক দালাল রোগীকে ঘিরে থাকে তাদের সেবা দেবে বলে। দালালরা সেবা দ্ওেয়ার নাম করে ডাক্তারের লেখা বিভিন্ন প্রেশক্রিপশন দেখতে দেখতে তারা রোগীদের কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট সময় নষ্ট করে এবং ডাক্তাররা রোগীর প্রেশক্রিপশনের সাথে দিয়ে দিচ্ছে ডাক্তারদের কন্ট্রাক কৃত সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের বা তাদের ব্যাক্তিগত চেম্বারের ঠিকানা। ডাক্তাররা বলে দিচ্ছে যে ঠিকানা দিচ্ছে সেই ঠিকানায় যেনো পরিক্ষাগুলো করান রোগীরা ।

অন্যদিকে সুমাইয়া নামের এক রোগীর বাবা বলেন, আমরা সরকারি হাসপাতালে আসি টাকা কম লাগবে বলে কিন্তু ডাক্তারের নিয়ম নীতির ফলে আমরা তাদের দেওয়া ঠিকানায় পরীক্ষাগুলো করিয়ে থাকি। যদি ডাক্তাররা তাদের কনট্রাককৃত প্রতিষ্ঠানে না যেতে বলতো তাহলে, আমরা যেখানে কম খরচে পরীক্ষাগুলো করা যেত সেখানে করাতাম। অবশেষে দেখা যায়, প্রাইভেট হাসপাতালে যা খরচ হতো এখানে তাই হচ্ছে ।

সাংবাদিক যখন দালাল চক্রকে জিজ্ঞাসা করে রোগীকে সাথে নিয়ে কোথায় যাওয়া হয়? তখন ডাক্তারদের দালাল বলে রোগীরা তাদের আতœীয়-স্বজন তাই তাদের এগিয়ে দিতে যাচ্ছে। কিন্তু দেখা যায় দালালরা বিভিন্ন সেবা মূলক পরীক্ষা করার কেন্দ্রে নিয়ে যায় রোগীদেরকে। রোগীকে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়, দালাল তাদের পরিচিত নন।