অনলাইন রিপোট: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করা হয়।
মঙ্গলবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় এদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়। জামুকার সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি। এই খুনের নেপথ্যে রয়েছেন জিয়াউর রহমান। জামুকার সভায় এদের মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়।’সভায় জামুকার সদস্য ও সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের খেতাব বাতিলের পাশাপাশি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের পক্ষে মতামত দেন। সভায় সবাই এ বিষয়ে একমত হন। জামুকার সুপারিশ অনুযায়ী, এখন তাদের খেতাব বাতিল করে গেজেট জারি করা হবে।মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘বীর উত্তম’ খেতাব দেওয়া হয়। এছাড়া শরিফুল হক ডালিম ‘বীর উত্তম’; নূর চৌধুরী ‘বীর বিক্রম’, রাশেদ চৌধুরী ‘বীর প্রতীক’ ও মোসলেহ উদ্দিন ‘বীর প্রতীক’ খেতাব পান। খুনি জিয়াসহ অন্যদের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি সন্তোস প্রকাশ করেছে। জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন।
জামুকার বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে গতকাল দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির কাকরাইলের কার্যালয়ে কথা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে দেওয়া রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জিয়াউর রহমান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। সংবিধানের মূলনীতি বাতিল করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা হয়েও স্বাধীনতাবিরোধী লোকজনকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেছেন।
হঠাৎ এখন কেন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হলো—এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘নিয়ম হচ্ছে, যারা মারা যায় তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা (ব্যবস্থা) যায় না। সে জন্য জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল আলম চাষীর বিরুদ্ধে এত দিন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এ রকম আরও যারা রয়েছে, তাদের বিষয়েও জামুকার বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এদের সকলের পদক, সুযোগ-সুবিধা বাতিল করা হবে। আপাতত জিয়াউর রহমান, খন্দকার মোশতাক ও মাহবুবুল আলম চাষীর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্বে অনেকেরই নোবেল পুরস্কার, ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করা হয়। তাদের হয়তো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাদ দেওয়া যাবে না, কিন্তু খেতাব বাদ যাবে, অপরাধের জন্য শাস্তি পাবে। ’যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদদ দিয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। এই অপরাধীরা কোনো সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।