নিজস্ব প্রতিবেদক:
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাহীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। যার ফলে, তারা আগের যেকোন সময়ের চেয়ে বেশ নাজুক অবস্থানে পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। তবে নতুন কর্মকৌশল ঠিক করা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে দলটি। দল পরিচালনার পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বিএনপিতে। এমতঅবস্থায় তাদের আগামী দিনের করণীয় নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছিলো নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিশেষ করে ঘুরে দাড়ানোর জন্য কী করতে হবে বা এই মূহুর্তে তাদের করণীয় কী এ বিষয়ে তাদের দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ ছিলোই না। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন ও দলীয় কর্মসূচী পালনে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। যার সূত্র ধরে, গত ৭ মার্চ একটি স্মরণ সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপি নেতাদের দায়িত্ব পালনে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। না’গঞ্জ বিএনপি নেতাদের উপর অসন্তোষেই ঘুরে দাড়াতে পারে না’গঞ্জ বিএনপি সেই সাথে উজ্জীবিত নেতারা। এমনটাই মনে করছেন জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
জেলার তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, নজরুল ইসলাম খান না’গঞ্জ বিএনপি নেতাদের এক হাত নেয়ার কারণেই যেকোন সময় ঘুরে দাড়াতে পারেন তারা। কারণ তিনি ওই স্মরণ সভায় বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে তাদের ব্যর্থতা গুলো তুলে ধরেছেন। তাদের কী করণীয় ছিলো আর তারা কী করেছে সেই সব কথা বলেছেন। এমনকি ভবিষ্যত কর্মসূচী নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। তার এই সকল বক্তব্যের জেরেই মনমরা বিএনপি বর্তমানে আবারও উজ্জীবিত। অচীরেই আন্দোলন, সংগ্রামে যেতে পারেন তারা। নজরুল ইসলাম খানের ওই বক্তব্যে যদি তাদের মাথায় ঢোকে তাহলে অবশ্যই ঘুরে দাড়াবে না’গঞ্জ বিএনপির নেতারা।
ওই স্মরণ সভায় নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অসন্তোষ হয়ে তাদের উদ্দেশ্যে করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দেশের অন্যান্য জায়গা গুলোর মত নারায়ণগঞ্জেও ভোট কেটে নেয়া হয়েছে। কী করলেন আপনারা, কেউ প্রতিহত করলেন না, কেউ ঠেকালেন না। আপনাদেরকে তো আমরা মানা করিনি বরং ওই রাতে গুলসান অফিসে বসে ফোন করেছিলাম। আর বলেছিলাম আপনারা ঠেকান, প্রতিহত করুন। কেউ কিছুই করেননি।
নারয়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে করে তিনি আরও বলেন, আপনারা মামলার কথা বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে কী মামলা নেই? বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা রয়েছে। আপনারা হামলার কথা বলেন, আমাদের ওপর কী হামলা হয়নি? আমার মাথার নিচেও হামলার দাগ রয়েছে, গুলির দাগ রয়েছে। তারপরেও তো আমরা আমাদের অবস্থানেই আছি। তাহলে আপনার কেন ভয় পান? আমাদের মা বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাগারে বন্দি।
হয় তাকে মুক্ত করবো আর তা না হলে আমরা সবাই মিলে আমাদের মায়ের কাছে যাবো।
জেলার রাজনৈতিক বোদ্ধারা মনে করেন, না’গঞ্জের তৃণমূল বিএনপির সাথে জেলার আপামর জনসাধারণের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তার কারন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি সংবাদের শিরোনাম হতে কেন্দ্রীয় বিএনপির কিছু রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে শহরের অলি-গলিতে মানববন্ধন করে। শেষ কবে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপি জেলার সাধারণ মানুষের নৈতিক কোন দাবী নিয়ে মানববন্ধন কিংবা সমাবেশ করেছে তা কারোরই জানা নেই। একটি রাজনৈতিক দলের সাথে যদি সাধারন মানুষের ক্রমসই দুরুত্ব বেড়ে যায় সেই রাজনৈতিক দলটিকে প্রকৃত রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে মনে হয়না। কারণ রাজনীতি হতে হবে জনবান্ধব, রাজনীতি হতে হবে মানুষের কল্যানের জন্য। যা বর্তমানে বিএনপির মন মানষিকতা নেই বললেই চলে। এভাবেই চলতে থাকলে নারায়ণগঞ্জ থেকে একদিন বিএনপি নামক দলটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তাদের মতে, নজরুল ইসলামের এমন বক্তব্যে প্রদানের পর অনেকটা নড়ে চড়ে বসেছেন না’গঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। অচীরেই তারা ঐক্যবদ্ধ হবে এবং কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের দলীয় কর্মসূচী পালন করবে।
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকার দৈনিক সংবাদচর্চার নিজস্ব প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, ওনারা যাদের ওপর জেলা কমিটি ও মহানগর কমিটির দায়িত্ব দিয়েছে সেই কমিটিই তো সরকারী দলের হয়ে কাজ করছে। প্রথমেই তাদের বিরুদ্ধে একটি অ্যাকশন নেয়া দরকার। এবং দলটিকে পরিস্কার করতে হবে।
যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা সরকারি দলের হয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাধারণ নাগরিকদের মতে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে ঘুরে দাড়াতে হবে। এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে হলে ঐক্যবদ্ধ ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই।