আজ সোমবার, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাবনায় ৫৯৫ চরমপন্থীর আত্মসমর্পণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ভুল বুঝে যারা উগ্রবাদ চরমপন্থী সংগঠনে যোগ দিয়েছিলেন, তারা নিজেদের ভুল উপলব্ধি করতে পেরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ করছেন। জলদস্যু, মাদক কারবারী ও চরমপন্থীরা সবাই একে একে আত্মসমর্পণ করছেন। আমাদের পুলিশ গোয়েন্দা বাহিনীর সঙ্গে ১০ বছর আগের বাহিনীর তুলনা করা চলবে না।

মঙ্গলবার বিকেলে পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনউদ্দিন স্টেডিয়ামে চরমপন্থীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। দেশের ১৪টি জেলার পূর্ববাংলার সর্বহারা, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা), নিউ পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও কাদামাটির নামের ৪টি চরমপন্থী সংগঠনের ৫৯৫ জন চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করেন। এ সময় তারা ৬৮টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৭৫টি দেশীয় অস্ত্র জমা দেন।

মন্ত্রী আরো বলেন, বিগত ১৯৯৯ সালেও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২ হাজার চরমপন্থী সদস্য আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। তিনি বলেন, যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেন নি। যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা আত্মসমর্পণ করলে তাদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, পাবনার এই অনুষ্ঠানে যে সকল চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করলেন, তাদের মধ্যে অনেকেই শিক্ষিত। তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার নির্দেশনা দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে পুলিশের আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ২০ বছর পরে আবার আজকের এই আত্মসমর্পণ। জঙ্গি ও মাদক ব্যবসায়ী অনেকেই পুলিশের সহযোগিতায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, পুলিশের অনেক সদস্য উগ্র জঙ্গিদের হাতে প্রাণ দিলেও তারা জঙ্গিবাদ দমন করতে সক্ষম হয়েছেন। উগ্রপন্থা এমন একটা রাস্তা ছিল যেন সেখান থেকে আর বেরুতে পারবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা তার পরিবর্তন করেছেন।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে নওগাঁ জেলার পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) প্রধান আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় চারুমজুমদারের আদর্শে সমাজ বিপ্লবের মাধ্যমে সুন্দর সমাজ গড়া সম্ভব ভেবেই চরমপন্থী সংগঠনে যোগ দেই। কিন্তু দলের আদর্শ, কথা ও কাজের মিল না থাকায় অন্ধকার জগতে পড়ে যাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে সারা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাচ্ছি। ভাবতে ভালো লাগছে। যারা এখনো আসেনি তাদেরকে বলি ফিরে আসুন।

পাবনা জেলার পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) প্রধান ইকবাল শেখের স্ত্রী রত্না খাতুন প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, তার স্বামী এ সংগঠন করায় পরিবার পরিজন নিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়াতে পারিনি। অন্ধকার জীবনের চেয়ে শান্তির পথ অনেক ভালো। তিনি তাদের জন্য সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাভোকেট শামসুল হক টুকু, পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেন, পাবনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আহমেদ ফিরোজ কবীর, রাজশাহী-৪ আসরে সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য নাদিরা ইয়াছমিন জলি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেন ও পাবনার জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন।

যে সব জেলা থেকে চরমপন্থীরা আত্মসমর্পণ করেন, সেসব জেলার মধ্যে পাবনায় ১৩২ জন, ফরিদপুরে ২৭ জন, রাজবাড়ীতে ৩৪, সিরাজগঞ্জে ৬৯, নাটোরে ২৭, নওগাঁয় ৭০, বগুড়ায় ১৫, টাঙ্গাইলে ৩১, রাজশাহীতে ৬০, খুলনায় ৩৫, নড়াইলে ০২, যশোরে ০২, সাতক্ষীরায় ০৬ ও জয়পুরহাটে ৮২ জন।