স্টাফ রিপোর্টার :
নারায়ণগঞ্জ চাষাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে যুবদল কর্মী আবুল হাসান স্বজনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ প্রায় ২শ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শনিবার নিহত যুবদল কর্মী আবুল হাসান স্বজনের বাবা আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক পরাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহম্মেদ পলক, নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানকেও আসামী করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার মিয়া। তিনি সংবাদচর্চাকে বলেন, মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামী করা হচ্ছে কি-না সেটি তিনি এ মুহূর্তে বলতে পারছেন না।
এদিকে সদর মডেল থানা পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী পরিষদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, নারায়ণগঞ্জ ৪ ও ৫ আসনের সাবেক দুই সংসদ সদস্য, তাদের পরিবারের দুই ছেলে, শ্যালকসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীসহ তাদের সহযোগী সংগঠনের শীর্ষপর্যায়ের নেতাদের আসামী করা হয়েছে।
নিহত যুবদলকর্মী আবুল হাসান স্বজনের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিগত সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীদের প্রত্যক্ষ নির্দেশে আওয়ামী-ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা আবুল হাসান স্বজনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। স্বৈরাচার হাসিনা ও তার সরকারের মন্ত্রী ও দলীয় ক্যাডারদের দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য এ মামলাটি দায়ের করেছেন তারা।
পরিবারের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অভিযোগের একটি কপি ও বিভিন্ন তথ্য সূত্রের মাধ্যমে মামলায় অপর আসামীদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মামলায় আরও যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত মো. শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোট ভাই আলী রেজা উজ্জ্বল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. মহসনি ভূইয়া, বিসিবি পরিচালক ও শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ বাদল, বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী, গোগনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজর আলী, বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমএস সালাম, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার প্রধান, নাসিক ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে মাউরা বাবু, সন্ত্রাসী বান্টি, ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির হোসনে ওরফে হোটেল মনির, ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা, ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এহসানুল হক নিপু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশ্রাফুল ইসলাম রাফেল, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রধান, জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি টিপু সুলতান, ছাত্রলীগ নেতা নির্জর দাস, সন্ত্রাসী খান মাসুদ, মাদক ব্যবসায়ী বিটু, লিটন সাহা, কোরবান, সুজিত সরকার, জাহাঙ্গীর আলম, রিফাত, নাছির, শ্যামল, অহিদুজ্জামান অহিদ, শুভ, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন আহম্মেদ, ফয়সাল, রামু সাহা, মিনাহজুল ইসলাম ভিকি, রিয়েল, গোগনগর ইউনিয়নের মেম্বার বাপ্পি, নাসির উদ্দিন ওরফে টুন্ডা নাছির। এছাড়াও আলোচিত এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ১শ ৫০ থেকে ২শ ৫০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয় যুবদলকর্মী আবুল হাসান স্বজন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ৬ আগষ্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল হাসান স্বজন মৃত্যুবরণ করেন। স্বজন যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন।